
দৈনিক মাআরিভ–এর কালো পাতায় মুদ্রিত হলো অবসরপ্রাপ্ত ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও মিশরবিষয়ক বিশ্লেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এলি ডেকেলের বিষাক্ত উচ্চারণ: “আল-আজহার মিশরের ভেতর থেকে ইসরায়েলবিরোধী ঘৃণার মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে।” এই কথার প্রতিটি অক্ষর ভীরু সাম্রাজ্যের আতঙ্কে লেখা, কারণ যে মিনার সত্য উচ্চারণ করে, তার কণ্ঠরোধ করা দমনযন্ত্রের সবচেয়ে পুরনো ষড়যন্ত্র।
আজহার যদি গাজার মাটিতে শিশুদের রক্তকে গণহত্যা বলে ডাকে, আজহার যদি নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ায়, তবে তোমরা তাকে ঘৃণার মুখপাত্র বলবে। কিন্তু সত্যকে ঘৃণা বলা মানেই ইতিহাসের কাছে আত্মস্বীকৃতি দেওয়া—তোমরাই ঘৃণার নির্মাতা। তোমাদের ট্যাংক ধ্বংস করে ঘরবাড়ি, কিন্তু এক হাজার বছরের বিবেকের দেয়াল ভাঙতে পারে না। আল-আজহার সেই দেয়াল, যার প্রতিটি ইট রক্তের নয়, আলোর।
মিশরের শাসকেরা এই ঘৃণার ভাষাকে নিজেদের ভাষা বানিয়ে নিয়েছে। তারা আল-আজহারের কণ্ঠকে চাপা দেওয়ার জন্য সেন্সরের শিকল পরিয়েছে, যেন গাজার কান্না কায়রোর আকাশে প্রতিধ্বনি না তোলে। আজকের মিশর সরকার আর জাতির অভিভাবক নয়; তারা এক নত সেতু, যা কায়রো থেকে তেল আবিবের দিকে ঝুঁকে আছে। তারা রাষ্ট্র নয়, তারা দালাল। তারা জনগণের ইতিহাস নয়, ইসরায়েলের ছায়া।
আজহারকে গলা টিপে ধরে তারা মনে করছে নিজেদের ক্ষমতা অটুট করছে। কিন্তু তারা জানে না—একটি জাতির আত্মাকে হত্যা করা মানে নিজের বুক ছিঁড়ে ফেলা। আজহারকে স্তব্ধ করলে মিশর নিজের অতীতকে হত্যা করবে, নিজের ভবিষ্যৎকে নির্বাসন দেবে। দাসত্বের ভাষা দিয়ে জাতিকে কখনো মুক্তির ইতিহাস লেখা যায় না।
এলি ডেকেলের সেই কথা—“ইসরায়েলবিরোধী ঘৃণার মুখপাত্র”—আজহার গর্বের সঙ্গে বুকের উপর ধারণ করবে, কারণ যে কণ্ঠ অন্যায়ের শত্রু হয়, সে-ই মানবতার বন্ধু। আর যে শাসক সেই কণ্ঠকে দমন করে, সে জনগণের নয়, সে তেল আবিবের গুলাম।
মাআরিভ ভুলে গেছে—আজহার পাথরের নয়; আজহার হলো আগুন। সেই আগুনে প্রথমে জ্বলে যাবে অত্যাচারের মুখোশ, তারপর নীরব দালালদের ইতিহাস। আজহার ঘৃণার মুখপাত্র নয়; আজহার সত্যের অগ্নিশিখা। আর সেই আগুনকে কেউ নেভাতে পারবে না—না ইসরায়েলের ট্যাংক, না দালাল শাসকের শিকল।
লেখক:
কলামিস্ট ও শিক্ষার্থী,
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,
কায়রো
এম.কে.