ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

১০ ঘণ্টা ডেলিভারির পর ভেঙে পড়লেন চীনা যুবক, বললেন— ‘জীবন আমাকে খালি পেটে শাস্তি দেয়’

প্রকাশিত: ২০:১২, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:১৩, ২৯ জুলাই ২০২৫

১০ ঘণ্টা ডেলিভারির পর ভেঙে পড়লেন চীনা যুবক, বললেন— ‘জীবন আমাকে খালি পেটে শাস্তি দেয়’

ছবিঃ সংগৃহীত

চীনের এক খাবার সরবরাহকর্মীর আবেগঘন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি জীবনের কঠিন বাস্তবতা, দীর্ঘ শ্রমঘণ্টা ও মানসিক ক্লান্তির কথা তুলে ধরেন। ভিডিওতে তিনি জানান, অল্প বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।

বর্তমানে যখন এক ক্লিকে খাবার পৌঁছে যায় দরজায়, তখন আমরা ভুলে যাই সেই মানুষদের কথা, যারা সূর্য, বৃষ্টি কিংবা ঠান্ডা উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে খাবার পৌঁছে দেন। গিগ ইকোনমির বিস্তারে চাকরি সৃষ্টি হলেও, এর সঙ্গে এসেছে অনিশ্চয়তা, মানসিক চাপ ও নিরাপত্তাহীনতা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ডেলিভারি রাইডাররা—দীর্ঘ সময় কাজ, অনিয়মিত আয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

সম্প্রতি এমনই এক চীনা ডেলিভারি কর্মীর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা সেই ভিডিওতে দেখা যায়, খাবার সরবরাহের পোশাক পরেই ক্যামেরার সামনে কাঁদছেন ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পাওয়ার যন্ত্রণা আজীবন তাড়া করে বেড়ায়।

ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল, “প্রতিদিন টানা ১০ ঘণ্টার বেশি খাবার ডেলিভারি করি, একটানা কাজ করতে হয়, কোনো বিশ্রাম নেই, ভবিষ্যতের কোনো নিশ্চয়তা নেই। একটু ঢিল দিলে সঙ্গে সঙ্গেই জীবন খালি পেটে শাস্তি দেয়। চিন্তা না করে উপায় আছে?”

তিনি বলেন, “আমার শিক্ষকরা বহুবার সতর্ক করেছিলেন, স্কুল না ছাড়ার জন্য বলেছিলেন। আমি শুনিনি। আজ বুঝি, কতটা ভুল ছিল।”

ভিডিওতে আরও বলেন, “আমি আমার বৃদ্ধ মা–বাবাকে ভালোভাবে রাখতে পারছি না, নিজের জীবনও গড়তে পারিনি। বুক ভেঙে যায়, কিন্তু এই কষ্টের কথা বলব কার সঙ্গে?”

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
ভিডিওটি ইন্টারনেটজুড়ে মানুষের মনে দাগ কেটেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ভাই কেঁদো না, যারা গ্র্যাজুয়েট তারাও তো আজ লড়ছে—তুমি একা নও।” আরেকজন মন্তব্য করেন, “যাদের পরিবার থেকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, তারা কতটা ভাগ্যবান—তা অনেকেই বোঝে না।”

আরও একজন লিখেছেন, “স্যার, আমি পড়ালেখা করেছি, কিন্তু অবস্থার দিক থেকে আপনিই আমার মতো।”

দুঃখজনক হলেও এমন ঘটনা নতুন নয়। চীনের হাংজু শহরে গত বছর ৫৫ বছর বয়সী এক ডেলিভারি কর্মী ১৮ ঘণ্টার কাজের পর বৈদ্যুতিক বাইকে ঘুমিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

গিগ ইকোনমির উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন আর বাস্তব জীবনের তিক্ততা এই ভাইরাল ভিডিওটি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—এই ব্যবস্থায় সুবিধাভোগী যেমন আছেন, তেমনি হারিয়ে যাওয়া কণ্ঠও আছে অনেক।

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/etimes/trending/viral-chinese-delivery-worker-cries-over-10-hour-shifts-says-life-punishes-him-with-hunger/articleshow/122971320.cms

ইমরান

×