
ছবি:সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে অসংখ্য সামরিক বিমানঘাঁটি থাকলেও, আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড়গুলো প্রায় সবই যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর (USAF) অধীনে পরিচালিত। কিছু ঘাঁটির পরিমাণ এতটাই বিস্তৃত যে সেগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসামরিক বিমানবন্দর — সৌদি আরবের কিং ফাহদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এই তালিকায় রয়েছে এমন ১০টি বিমানঘাঁটি, যেগুলো শুধু আয়তন নয়, কৌশলগত গুরুত্ব, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও বৈশ্বিক নিরাপত্তায় ভূমিকার জন্যও আলাদা গুরুত্ব রাখে।
১. ব্যারি এম. গোল্ডওয়াটার রেঞ্জ, অ্যারিজোনা
এই বিশাল প্রশিক্ষণ এলাকা প্রায় ১৭ লাখ একর জমি নিয়ে গঠিত। যদিও এখানে কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না, এটি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানগুলোর জন্য লাইভ ফায়ার প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই রেঞ্জে নিয়মিত যুদ্ধ মহড়া হয়, যেখানে পাইলটরা বাস্তব যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
২. উটাহ টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জ
প্রায় একই আকারের এই রেঞ্জে আধুনিক অস্ত্র ও মিসাইলের পরীক্ষা চালানো হয়। বছরে হাজার হাজার যুদ্ধবিমান এখানে মহড়ায় অংশ নেয়। এটি শুধু যুদ্ধের প্রস্তুতির জায়গা নয়, বরং সামরিক প্রযুক্তির পরীক্ষাগারও বলা যায়।
৩. নেলিস এয়ার ফোর্স বেস কমপ্লেক্স, নেভাডা
এই ঘাঁটি শুধু একটা জায়গা নয়—এটি একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আকাশসীমা নিয়ন্ত্রিত সামরিক এলাকা। এখানে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত “Red Flag” মহড়া, যেখানে যুদ্ধবিমানগুলো বাস্তবসম্মত যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নেয়। এই ঘাঁটির আওতায় থাকা অঞ্চলটি অনেক দেশের সামগ্রিক আয়তনের চেয়েও বড়।
৪. জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন, আলাস্কা
উত্তরের কঠিন জলবায়ুতে অবস্থিত হলেও এই ঘাঁটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৫. জয়েন্ট বেস সান আন্তোনিও, টেক্সাস
এটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি মিলিয়ে তৈরি। এখানে নতুন সৈনিকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে চিকিৎসা ও বিমানচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর জনবল এত বেশি যে এটিকে একটি “সামরিক শহর” বললেও ভুল হবে না।
৬. কাদেনা এয়ার বেস, জাপান
জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপে অবস্থিত এই ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি। এটি কেবল একটি ঘাঁটি নয়, বরং একটি কৌশলগত মোচড়—যেখান থেকে দ্রুত সময়ে এশিয়ার যেকোনো প্রান্তে প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব।
৭. র্যামস্টেইন এয়ার বেস, জার্মানি
এই ঘাঁটি ইউরোপ ও আফ্রিকার যুক্তরাষ্ট্র ও NATO অভিযানগুলোর জন্য প্রাণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এটি ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত বিমানঘাঁটি এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমান পরিবহন কেন্দ্র।
৮. এগলিন এয়ার ফোর্স বেস, ফ্লোরিডা
যদি প্রশ্ন হয়, কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক অস্ত্র পরীক্ষা হয়—উত্তর হবে এখানেই। এই ঘাঁটি শুধু বিমান চালানোর জায়গা নয়, বরং এটি একটি গবেষণাগার। এখানেই তৈরী হয় আগামী দিনের যুদ্ধাস্ত্রের পরিকল্পনা ও কার্যকারিতা।
৯. এডওয়ার্ডস এয়ার ফোর্স বেস, ক্যালিফোর্নিয়া
এই ঘাঁটিতে রয়েছে একটি বিশাল শুষ্ক হ্রদ যা পরীক্ষামূলক বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য আদর্শ। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিপ্লবাত্মক সামরিক প্রযুক্তির জন্ম হয়েছে এখান থেকেই।
১০. পিটুফিক স্পেস বেস, গ্রিনল্যান্ড
গ্রিনল্যান্ডের বরফ ঢাকা পাহাড়ঘেরা এলাকায় অবস্থিত এই ঘাঁটি USAF-এর সবচেয়ে উত্তরাঞ্চলীয় ঘাঁটি। এখন এটি মার্কিন মহাকাশ বাহিনীর অধীনে পরিচালিত হয়। এখান থেকে স্যাটেলাইট নজরদারি ও ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। চরম ঠান্ডা আর নিঃসঙ্গ পরিবেশের মধ্যেও এই ঘাঁটি বিশ্ব নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
🔸 বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ এলাকা কোনটি?
নেলিস এয়ার ফোর্স কমপ্লেক্স, যার আয়তন ৫,০০০ বর্গমাইল ছাড়িয়ে গেছে।
🔸 সর্ববৃহৎ জমির উপর স্থাপিত বিমানঘাঁটি কোনটি?
ব্যারি এম. গোল্ডওয়াটার রেঞ্জ, যা প্রায় ১৭ লাখ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত।
🔸 যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি কোনটি?
জাপানের কাদেনা এয়ার বেস, যেখানে প্রায় ১৮,০০০ মার্কিন সেনা ও তাদের পরিবার বসবাস করে।
🔸 যুদ্ধাস্ত্র উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে পরিচিত ঘাঁটি কোনটি?
ফ্লোরিডার এগলিন এয়ার ফোর্স বেস।
🔸 সর্বউত্তরের মার্কিন ঘাঁটি কোনটি?
গ্রিনল্যান্ডের পিটুফিক স্পেস বেস।
এই বিশাল বিমানঘাঁটিগুলো কেবলমাত্র সামরিক প্রশিক্ষণ বা অস্ত্র পরীক্ষার কেন্দ্র নয়, বরং আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ। প্রতিটি ঘাঁটি একটি গল্প—প্রযুক্তির উৎকর্ষ, মানুষজনের নিষ্ঠা এবং একটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া প্রস্তুতির গল্প।
মারিয়া