
ছবি: সংগৃহীত
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাফলং এবং গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "একটা সুন্দর জিনিস হাতে ধরে কেমন করে অসুন্দর করতে হয় শিখতে হলে বাংলাদেশে আসতে হবে।"
একটি আলোচনা সভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এখন রাজনৈতিক স্বার্থ ও দখল বাণিজ্যের বলি হয়েছে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “আপনি ভিয়েতনামে যান পাথরের উপর পানি দেখতে, আর আমাদের দেশে সোমেশ্বরীতে যান বালুর উপর পানি দেখবেন। কিন্তু আমরা নিজেরা এই সৌন্দর্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছি।”
“৫ আগস্টের পর গাজীপুরে ৮৮ একর বনভূমি দখল হয়ে যায়। আমি বলেছি—আগের দখল ছাড়ুন, যেগুলো নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। আমি নতুন দখল উচ্ছেদ করতে চাই। কিন্তু এই কাজ এত সহজ নয়। বহু বিরূপ মন্তব্য, চাপ এবং অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, ইউটিউব ঘেঁটে দেখলেই বোঝা যাবে বন বিভাগ কিভাবে নিজের দখলকৃত জমি উদ্ধার করতে হিমশিম খায়। এর পেছনে রাজনীতি ও মানবিকতা শোষণের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
“জাফলংয়ের মত অপূর্ব সুন্দর একটি স্থান আমাদের চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ সেখানকার পাথর উত্তোলন করে দেশের মোট চাহিদার মাত্র ৬ ভাগ পূরণ হয়, বাকিটা ৯৪% আমদানি করতে হয়। তাহলে এই ছয় ভাগের জন্য আমরা কেন এত বড় ক্ষতি করছি?”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি পাথর না তুলে ইকোটুরিজম গড়ে তুলি, তাহলে সরকার এবং জনগণের আর্থিক আয় অনেক বেশি হতো। একজন জেলা প্রশাসক এমনটিই লিখেছিলেন যে, পাথর উত্তোলন না করে ইকোটুরিজম চালু করলে আরও বেশি আয় হতো।”
“এই যে মানুষজন সারাদিন পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে পাথর তোলে—এটা কি এমপ্লয়মেন্ট না এক্সপ্লয়েটেশন? এটা একদম ক্লিয়ার কেস অফ এক্সপ্লয়েটেশন।”
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “৪ বছর পাথর তোলা বন্ধ ছিল কিন্তু এখন উপদেষ্টা হয়ে আর পারলাম না।”
এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, এই পাথর উত্তোলনের পেছনে একটি সর্বদলীয় ঐক্য কাজ করছে, কিন্তু প্রকৃতি রক্ষায় ঐক্য দেখা যায় না।
পরিবেশ উপদেষ্টা হিসেবে তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক ধ্বংস যেন বৈধতা না পায় এবং জাফলংসহ দেশের অপরূপ প্রাকৃতিক স্থানগুলোকে ইকোটুরিজম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
ছামিয়া