ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

বদলে যাবে ঢাবির চিত্র, ঢেলে সাজাতে মেগা প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ২৭ জুলাই ২০২৫

বদলে যাবে ঢাবির চিত্র, ঢেলে সাজাতে মেগা প্রকল্প অনুমোদন

ছবি:সংগৃহীত

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, দেশের নিজস্ব অর্থায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পাঁচ বছর মেয়াদি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে, যা এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর একটি। প্রধান উপদেষ্টাও এই প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি।

ড. মাহমুদ বলেন, “এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি একাডেমিক ভবন, ছাত্রীদের জন্য চারটি এবং ছাত্রদের জন্য পাঁচটি আবাসিক হল নির্মাণ করা হবে। এতে মোট ২,৬০০ ছাত্রী এবং ৫,১০০ ছাত্রের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়াও নির্মাণ করা হবে শিক্ষকদের ও কর্মকর্তাদের জন্য দুটি আবাসিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, পাঁচটি অন্যান্য ভবন, একটি স্টেডিয়াম ও ডাকসু ভবনসহ অন্যান্য সহায়ক স্থাপনা।”

তিনি আরও বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো সম্পর্কে বাইরে থেকে এখনো মানুষ সালিমুল্লাহ মুসলিম হল কিংবা কার্জন হলের ছবি দেখে বিভ্রমে পড়ে, কিন্তু বাস্তব অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। অনেক হলের অবস্থা এতটাই খারাপ যে সেগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ে, লোহার রড পর্যন্ত দেখা যায়। অথচ এতদিন এ নিয়ে সেভাবে কোনো সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”

তিনি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসার পরই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে আগামী কয়েক দশকের জন্য শিক্ষা, আবাসন ও বিনোদনমূলক অবকাঠামোর উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, “পাকিস্তান আমল থেকে এখন পর্যন্ত ছেলেদের জন্য কয়েকটি হল নির্মাণ ছাড়া আর তেমন কিছু হয়নি। অথচ বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত আবাসিক সুবিধাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নতুন হলে ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে। অনুপাত অনুযায়ী নয়, বরং বেশি সুবিধা নিশ্চিত করার দিকেই জোর দেওয়া হবে।”

তিনি আরও জানান, “প্রয়োজনে শামসুন্নাহার হলের আশপাশে নতুন জায়গা খুঁজে নতুন হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী ভবন যেমন—এসএম হল, কার্জন হল, জগন্নাথ হল—এই স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ করা হবে।”

যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ মাত্র ৩৫০ একর, তাই অতিরিক্ত জায়গা অধিগ্রহণ না করে, পুরনো ভবনের স্থানেই নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে করে পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং ক্যাম্পাসে খোলা জায়গার পরিমাণও রক্ষা পাবে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ড. মাহমুদ বলেন, “আমি নিজে ১৯৬০-এর দশকে এসএম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। তখনকার হলগুলোর পরিবেশ এবং সুবিধা এখনকার তুলনায় অনেক উন্নত ছিল, যদিও দেশের আর্থিক সক্ষমতা তখন অনেক কম ছিল। এখন মাথাপিছু আয়ে উন্নতি হলেও আবাসিক সুবিধার মান নেমে গেছে, এটা এক বিরাট বৈপরিত্য।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি নিরাপদ, আধুনিক ও সম্মানজনক শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে।

তথ্যসূত্রঃ https://youtu.be/aJWfbf1XcL0?si=AM-bnVaFm1atkt3g

 

মারিয়া

×