ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

ফ্যাটি লিভার দূর করুন মাত্র ৩টি সহজ অভ্যাসে 

প্রকাশিত: ১৯:০৫, ২৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:০৭, ২৭ জুলাই ২০২৫

ফ্যাটি লিভার দূর করুন মাত্র ৩টি সহজ অভ্যাসে 

অনেকেই আমাদের যকৃতের (লিভারের) কথা খুব একটা ভাবেন না যতক্ষণ না কোনো সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু বাস্তবে, এটি আমাদের শরীরের সবচেয়ে পরিশ্রমী অঙ্গগুলোর একটি। যকৃত আমাদের খাবার হজমে সাহায্য করে, শরীর থেকে নানা ধরনের অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে এবং শরীরকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় লিভারের গুরুত্ব আরও অনেক বেশি। 

এটি ‘রক্তবাহ স্রোত’-এর সঙ্গে জড়িত, যা রক্ত ও পিত্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, তখন তার প্রভাব শুধু লিভারে থেমে থাকে না, বরং হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, পাকস্থলীসহ শরীরের অনেক অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।

ড. সোমিত কুমার, একজন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ, বলেন যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তন এনে যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। তিনি এমন কিছু খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার কথা বলেছেন যা লিভারকে সুস্থ ও শক্তিশালী করে।

আয়ুর্বেদ মতে, যকৃতের সুস্থতা পিত্ত দোষের ওপর নির্ভর করে, যা শরীরের উত্তাপ এবং হজম শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমরা অতিরিক্ত মদ্যপান করি বা বেশি লবণাক্ত, টক, ঝাল খাবার খাই, তখন পিত্ত দোষ ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। এর ফলে যকৃতের কোষে প্রদাহ শুরু হয়, কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শরীরে বার্ধক্যের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয়।

আয়ুর্বেদে ‘অগ্নি’ বা হজম আগুনের কথা বলা হয়, যা আমাদের খাওয়া-দাওয়াকে পরিণত করে শরীরের পুষ্টিতে। যকৃতের ভিতরে পাঁচটি সূক্ষ্ম অগ্নি থাকে, যেগুলো একসঙ্গে কাজ করে শরীরকে ডিটক্সিফাই, হজম এবং নবায়ন করে।

যকৃতের স্বাস্থ্য রক্ষায় কোনো জটিল ডায়েট বা ব্যায়াম নয়, বরং নিয়ম মেনে সময়মতো খাওয়া জরুরি। অপ্রাসঙ্গিক খাবার জুটিকে (যেমন বিরুদ্ধ স্বাদের খাবার) এড়িয়ে চলতে হবে। খাবারে ছয় রকম স্বাদ মিষ্টি, টক, লবণ, তিতা, কষা ও কটু অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পানি বা হালকা ভেষজ পানীয় নিয়মিত খাওয়া উচিত, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়।

সাধারণ দানা-শস্য যেমন চাল, গম, ওটস, বাজরা সহজে হজম হয়। ডালের মধ্যে মসুর ও মুগ বেশি সহনীয়, যেখানে রাজমা, ছোলা বা বড় ডালগুলো হজমে ভারী। ফল হিসেবে আপেল, পেঁপে, ডুমুর ও ডালিম যকৃতের জন্য উপকারী। 

তবে খুব বেশি সাইট্রাস ফল বা আম পরিহার করা ভালো। শাকসবজির মধ্যে গাজর, চালকুমড়ো ভালো, বাঁধাকপি ও মরিচ খেতে হলে পরিমাণে সাবধান থাকা উচিত। দুগ্ধজাত খাবারে ঘি ও মাখন বেছে নেওয়া ভালো, দই ও পনির কম খাওয়া উচিত।

হলুদে থাকা কারকিউমিন একটি শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী উপাদান। রসুন, আদা, জিরা, মৌরি ও গোলমরিচ হজমে সহায়ক এবং যকৃতের ওপর চাপ কমায়। গুডুচি ইমিউনিটি বাড়াতে ও টক্সিন দূর করতে ব্যবহৃত হয়। ভূমি আমলকি যকৃতের কোষ পুনর্জীবিত করে। যষ্টিমধু প্রদাহ কমায় ও অন্ত্র-যকৃতের সম্পর্ক সুগম করে। এছাড়া আন্ড্রোগ্রাফিস, কাটুকি, সোয়ের্টিয়া জাতীয় ভেষজ আয়ুর্বেদে সুরক্ষামূলক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন হালকা হাঁটা, যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং দরকার। মানসিক চাপ যকৃতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। গভীর ঘুম যকৃতের কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে, তাই পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।

যকৃতের সুস্থতা শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস নয়, পুরো জীবনধারার একটি ব্যাপক চর্চা। আয়ুর্বেদের এই সহজ অভ্যাসগুলো মেনে চললেই শরীর হবে আরও সতেজ, যকৃত থাকবে সুস্থ ও শক্তিশালী। আজ থেকেই এই অভ্যাসগুলো শুরু করুন, নিজেই অনুভব করবেন শরীরের পরিবর্তন।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/bdh8xnd3

আফরোজা

×