
শ্রাবণ মানেই সারাদিন আকাশে বিশাল কালো মেঘ
‘মন মোর মেঘের সঙ্গী/ উড়ে চলে দিগ্দিগন্তের পানে/ নিঃসীম শূন্যে/ শ্রাবণ বর্ষণ সংগীতে/ রিমিঝিম রিমিঝিম রিমিঝিম’ কিংবা কালজয়ী সেই নজরুলগীতি- ‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে/ বাহিরে ঝড় বহে/ নয়নে বারি ঝরে...’
শ্রাবণ মানেই সারাদিন আকাশে বিশাল কালো মেঘখন্ডগুলো ভেসে বেড়ায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরে। থামার নাম-গন্ধ নেই। শ্রাবণধারা ঝরেই চলে। কখনো আবার রোদ-বৃষ্টি খেলা করে। তার ফাঁকে সূর্য উঁকি দেয়। পাশেই কখনো থাকে সাদা মেঘখ-। আবার কখনো নামে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি প্রিয় মানুষগুলোর তখন আর কাজে মন বসে না। মন হয়ে ওঠে চঞ্চল। বারান্দা বা জানালায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে আর বৃষ্টির ঝাপটা মুখে লাগাতে কি যে ভালো লাগে! কেউ ছুটে যান ছাদে বা বাসার সামনের রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজতে।
কেউ আবার ঘরে ফেরার পথে রিক্সায় বসেই করেন বৃষ্টি বিলাস। ঘরের আয়োজনে থাকে খিচুড়ি। কেউ বা বিকেলে মুচমুচে কোনো নাস্তার সঙ্গে চা নিয়ে বারান্দায় বসে যান বৃষ্টি উপভোগ করতে। আর সঙ্গী যদি হয় প্রিয় কেউ, তাহলে তো কথাই নেই। টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ শহরের মানুষ উপভোগ করতে পারে না। সারাদিন রিমঝিম বৃষ্টিতে মনও উদাস হয়ে যায়। হারানো কত স্মৃতি মনে পরে যায়! পাওয়া না পাওয়ার কত হিসাব মনের মধ্যে উপচে পড়ে। ইচ্ছে হয় এই ঝুম বৃষ্টিতে কোনো এক নদীর পাড়ে চুপটি করে সারাদিন ভিজতেই থাকি। মন বলে- ভেতরে এতদিন ধরে জমে থাকা কষ্টগুলো ধুয়ে মুছে যাক।
তবে মনের আনন্দের এই বৃষ্টি বিলাসে কিন্তু আপনার স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। বৃষ্টির পানিতে থাকে কিছু প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এটি ত্বক ও চুলের যতেœও বেশ কার্যকর। কি কি উপকার পাবেন বৃষ্টিতে ভিজলে-
ত্বকের জন্যে: বৃষ্টির পানি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে নরম ও মসৃণ করে। এটি ত্বককে ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে এবং বিভিন্ন চর্মরোগ যেমন- র্যাশ, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়ক। বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে ত্বক পরিষ্কার হয় এবং ঘামাচি থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
চুলের যতেœ: বৃষ্টির পানি চুলের গোড়া থেকে ময়লা ও খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। চুলকে স্বাস্থ্যকর ও চকচকে করে তোলে। তবে বৃষ্টিতে ভিজে এসে ভালো করে শ্যাম্পু করে নেয়া উত্তম।
কানের সমস্যা: বৃষ্টির পানিতে কানের সমস্যাও দূর হয়। কানের ব্যথা ও ইনফেকশন দূর করতে এই পানি বেশ উপকারী। তবে মাত্রাতিরিক্ত ভিজলে বা বৃষ্টির সাথে বাতাস থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই ভেজার পর পরই হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিবেন।
শ্বাস-প্রক্রিয়া উন্নত করে: বৃষ্টির সময় বাতাস বিশুদ্ধ থাকে। তাই এ সময়ে দেহে প্রবেশ করা বায়ু আমাদের শ্বাসপ্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।
হজমক্ষমতা বৃদ্ধি: বৃষ্টির পানিতে অ্যালকালাইন নামক উপাদান থাকে, যা এসিডিটি কমায় এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে পানি অবশ্যই পরিষ্কার হওয়া উচিত।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: বৃষ্টির পানিতে ভিজলে শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। তাই মন খারাপ থাকলে দেখবেন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে, আর ভালোও লাগে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এতে কিছু প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থ থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বিষাক্ত পদার্থ দূরীকরণ: বৃষ্টির পানি পান করলে শরীরের ক্ষতিকারক বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়।
এছাড়াও ঘরে যাদের আইপিএস আছে তারা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
আইপিএস এ মাঝে মাঝে পানি দিতে হয়, সেখানে এই পানি ব্যবহার করতে পারেন। যাদের ঠান্ডার সমস্যা আছে তাদের বেশি সময় বৃষ্টিতে না ভেজাই শ্রেয়। আর ভিজলেও ১০-১৫ মিনিটের বেশি না। বৃষ্টিতে ভেজার পর ঘরে এসে অবশ্যই ভালো করে গোসল করে নিবেন এবং ভালো করে চুলের গোড়া মুছে নিবেন। না হয় ঠান্ডা জ¦র লেগে যেতে পারে।
প্যানেল হু