ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

বৃদ্ধ বয়সের সঙ্গী পাখি

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ২৭ জুলাই ২০২৫

বৃদ্ধ বয়সের সঙ্গী পাখি

জ্যোতিষময় বড়ুয়া, বন্দনা বড়ুয়া

দুটো মাত্র কক্ষ। একটিতে হাসিবুর রহমান থাকেন। অপরটিতে বিভিন্ন প্রজাতির খাঁচার পাখি সুন্দর করে সাজানো। হাসিবুর সরকারি চাকরি করতেন। অবসর নিয়েছেন অনেকদিন হলো। তিন ছেলে এক মেয়ের পিতা। ছেলেমেয়েদের বিয়ের পর তারা আলাদা বাড়িতে থাকে। স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে চার বছর। একা মানুষ, সময় কাটে না। নিঃসঙ্গ জীবনযাপন ছিল তার। সব থেকেও যেন কিছুই নেই। বৃদ্ধ বয়সটা তার কাছে বোঝা ই মনে হচ্ছিল।

বছর দুয়েক আগে সকালবেলা হাঁটতে গিয়ে পরিচয় হয় সাজ্জাদ খানের সঙ্গে। একদিন সাজ্জাদ খানের বাসায় গিয়ে তার খাঁচার পাখি দেখে মুগ্ধ হন হাসিবুর। কয়েকদিন পরে এক জোড়া লাভবার্ড কিনে নিয়ে আসেন। যতœ আত্তির বিষয়ে পরামর্শ নেন সাজ্জাদ খানের কাছ থেকে। বিদেশি খাঁচার পাখি লাভবার্ড তাকে নতুন জীবন দেয়। এতদিন যে জীবন তার কাছে বোঝা মনে হতো, এখন তার কাছে তা প্রচুর আনন্দের, পরিতৃপ্তির। হাসিবুর বলেন- লাভবার্ড খুব লক্ষ্মী পাখি।

ওরা মানুষের সঙ্গ পছন্দ করে। প্রচুর আনন্দ দেয়। নিঃসঙ্গতায় যারা ভুগছেন, ছেলে মেয়ে ছেড়ে একাকি জীবন যাদের। তারা খাঁচায় লাভবার্ড বা অন্য কোনো পাখি পুষে আনন্দ পেতে পারেন। সময় ভালো কাটবে তাতে- এমনটাই বলেন হাসিবুর রহমান। প্রথমে একজোড়া লাভবার্ড ছিল। এখন দশ জোড়া। সঙ্গে কিছু ফিঞ্চ পাখিও আছে।
স্বামী মারা যাবার পর খাদিজা বেগম একা হয়ে যান। ছেলে মেয়েরা যে যার মত ব্যস্ত। তারা একটু ভালো করে কথা বলারও সময় পায় না। মোটেই সময় যাচ্ছে না খাদিজা বেগমের। টিভি আর কতক্ষণ দেখা যায়। চোখেও সমস্যা আছে। একদিন নিউমার্কেট থেকে ফেরার পথে হঠাৎ চোখ আটকে যায় সড়কের পাশে পাখির দোকান। নানা রকম পাখি। গাড়ি থেকে নেমে দোকান ঘুরে ঘুরে পাখি দেখলেন, জানলেন আদ্যেপান্ত। এভাবে বেশ কয়েকদিন পাখি দেখলেন।

একদিন এক জোড়া বাজেরিগার কিনে বাসায় ফিরলেন। পাখির যতœ নেন, ওদেরকে খাওয়ান, খাঁচা পরিষ্কার করেন। ফেসবুকে পাখির গ্রুপে যান, ডক ফাইল পড়েন- সব কিছুই তার কাছে প্রচুর আনন্দময় মনে হয়। পাখি সুন্দর করে বাসা বানায়, এরপর ডিম পাড়ে, বাচ্চা হয়। খাদিজা বেগমের জন্য সে দিনটা ছিল স্মরণীয়। ছেলে মেয়েরা মায়ের কা- দেখে অবাক হয়। তারা উৎসাহ দেয়। বিদেশে অসংখ্য বয়স্ক মানুষ আছেন যারা খাঁচার পাখি পালন করেন। সত্তর পেরোনো খাদিজা বেগমের এখন আর মন খারাপ হয় না। পাখির সঙ্গে তার সম্পর্ক দেখার মতো।
আমাদের সমাজে প্রবীণ যারা এক সময় কর্মক্ষম ছিলেন, ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছেন। এখন তারা নিঃসঙ্গ। সময় কাটে না। শেষ বয়সে আনন্দ খুঁজে পান না। তাদের জন্য আনন্দ পাবার সহজ উপায় খাঁচার নানা প্রজাতির বিদেশি পাখি। খাঁচার পাখির মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হলো লাভবার্ড, বাজেরিগার, ফিঞ্চ, ককাটেইলসহ নিওফেমা প্রজাতির বিভিন্ন পাখি। প্রজাতি আর বয়স ভেদে পাখির দাম কম বেশি হয়।

ঢাকার কাঁটাবন, নিমতলী, মিরপুর-১ ইত্যাদি স্থানে পাখির দোকান রয়েছে। এছাড়া জেলা শহরগুলোতেও পাখি বিক্রির দোকান রয়েছে। খাঁচার পাখি পালন বাংলাদেশে আইনগতভাবে বৈধ। ইসলামের দৃষ্টিতেও খাঁচায় পাখি পালন নিষিদ্ধ নয়। খাঁচার পাখিতে অভিজ্ঞ আবদুল হান্নান দিনার জানান, বিদেশি খাঁচার পাখি সব বয়সী মানুষের আনন্দ বিনোদনে সহায়ক হতে পারে। অল্প জায়গায় কম ঝামেলায় খাঁচার পাখি পালন করা যায়।

প্যানেল হু

×