
ছবি: প্রতীকী
রাতে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যাওয়া অনেকের জন্যই চিন্তার কারণ হতে পারে। মাঝরাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া, দীর্ঘ সময় ঘুম না আসা কিংবা সকালে ক্লান্ত অনুভব করা — এসব সমস্যার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। এটি যদি মাঝে মাঝে ঘটে, তাহলে খুব একটা চিন্তার কিছু নেই। তবে যদি প্রায় প্রতিদিন এ ধরনের সমস্যা হয়, তাহলে তা শরীরের বা মানসিক কোনো অসুস্থতার ইঙ্গিত দিতে পারে।
রাতের ঘুম মানুষের শরীরের পুনর্গঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম ভালো না হলে শরীর এবং মস্তিষ্ক উভয়ই ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই ঘুমের ব্যাঘাত হলে তা নানাভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।
ঘুমের মাঝে বারবার জেগে ওঠার একটি সাধারণ কারণ হতে পারে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। কারো যদি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ভয়, উদ্বেগ বা মানসিক অস্থিরতা থাকে, তাহলে তা ঘুমে প্রভাব ফেলে। অনেক সময় মনের মধ্যে চিন্তার ঝড় চলতে থাকলে, ঘুম গভীর হতে চায় না। ফলে রাতে একাধিকবার ঘুম ভেঙে যায়।
এছাড়াও ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা থেকেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিষণ্ণতা থাকলে রাতে ঘুম আসতে দেরি হয়, মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়, এমনকি খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর আর ঘুম আসে না। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
শরীরের কিছু অসুস্থতাও রাতে ঘুম ভাঙার কারণ হতে পারে। যেমন— ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায়ই রাতের বেলা প্রস্রাবের বেগ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায়। যাদের প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে সমস্যা থাকে, বা যাদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেছে, তাদেরও ঘন ঘন প্রস্রাবের জন্য ঘুম বারবার ভাঙে। আবার অনেক সময় হার্টের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েডের সমস্যা কিংবা ফুসফুসের অসুখ থাকলেও ঘুমে বিঘ্ন ঘটে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো স্লিপ অ্যাপনিয়া। এই রোগে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয় ঘুমের মধ্যে। অনেক সময় রোগী নিজেও বুঝতে পারেন না, কিন্তু পরিবারের লোকেরা লক্ষ্য করেন যে ঘুমের মধ্যে সে হঠাৎ করে দম বন্ধ হয়ে উঠছে, আবার জেগে যাচ্ছে। এটি খুবই গুরুতর সমস্যা, যা থেকে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
অনেক সময় রাতে অতিরিক্ত খাওয়া, বেশি চা-কফি পান করা, ধূমপান কিংবা মদ্যপান করলেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ঘুম ভাঙার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যেসব ওষুধে ক্যাফেইন জাতীয় উপাদান থাকে, সেগুলো রাতে না খাওয়াই ভালো।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের ধরণেও পরিবর্তন আসে। বয়স বেশি হলে ঘুমের গভীরতা কমে যায় এবং সহজেই ঘুম ভেঙে যেতে পারে। এটি স্বাভাবিক হলেও, যদি ঘুমের অভাবে দৈনন্দিন কাজে প্রভাব পড়ে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
রাতে ঘুম ভাঙার পেছনে আরেকটি কারণ হতে পারে পরিবেশগত সমস্যা। ঘরে আলো বেশি থাকা, অতিরিক্ত শব্দ, মশার উপদ্রব, বা বিছানার অস্বস্তিকর পরিবেশ — এসব কারণেও ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
মাঝে মাঝে রাতের বেলা ঘুম ভেঙে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে যদি এটা নিয়মিত ঘটে এবং শরীরে ক্লান্তি, মানসিক অস্থিরতা কিংবা কাজে মনোযোগে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এমন হলে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো। কারণ ঘুম শুধু বিশ্রামের জন্য নয়, এটি আমাদের সুস্থ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়মিত ও গভীর ঘুম না হলে শরীর ও মনের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। তাই রাতের ঘুম ভাঙা কোনো সময় রোগের সংকেতও হতে পারে — সতর্ক হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এম.কে.