ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির

তরুণদের একাংশ বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মীয় আবেগে গণতন্ত্রকে “কুফরি” বলে মনে করে

প্রকাশিত: ০১:৩৬, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০১:৩৮, ২৮ জুলাই ২০২৫

তরুণদের একাংশ বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মীয় আবেগে গণতন্ত্রকে “কুফরি” বলে মনে করে

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের জনপ্রিয় ইসলামি চিন্তাবিদ ও বক্তা মুফতি তারিক মাসুদ বাংলাদেশ সফরে এসে গণতন্ত্র ও ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া তার উর্দু ভাষণের অনুবাদ থেকে জানা যায়, তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন— “গণতন্ত্র ইসলামে হারাম নয়।”

তিনি বলেন, ইসলামের মূল চেতনা হচ্ছে—ন্যায়ভিত্তিক শাসন। শাসক নির্বাচনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতিকে ইসলাম বাধ্যতামূলক করে দেয়নি। বরং স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী যেকোনো পদ্ধতিতে যদি একজন আল্লাহভীরু, জ্ঞানী, হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি নেতৃত্বে আসেন এবং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করেন, সেটাই ইসলামসম্মত।

মুফতির ভাষায়, “সাহাবায়ে কেরাম যেমন পারস্পরিক পরামর্শে হজরত আবু বকর (রা.)-কে নির্বাচন করেছিলেন—সেটাই সর্বোত্তম। তবে সেই আদর্শ পদ্ধতি যদি আজকের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়ন সম্ভব না হয়, তবে যে পদ্ধতি কম ক্ষতিকর ও সময়োপযোগী—সেটাই গ্রহণযোগ্য।”

তিনি উদাহরণ দেন—গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে কেউ ভালো শাসন দিতে পারেন, আবার কোনো সময় একজন অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় এলেও ন্যায়ের শাসন দিতে পারেন। “তুরস্কে এরদোয়ান গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় এসে দেশ ও ইসলামের জন্য ভালো কাজ করেছেন,” বলেন তিনি।

“গণতন্ত্র কুফরি নয়”—এই বার্তা বাংলাদেশে খুব কম আলেমই স্পষ্টভাবে দেন, মন্তব্য করেছেন এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির। তিনি ফেসবুকে লেখেন, বাংলাদেশের অনেক আলেম গণতন্ত্রের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও 'গণতন্ত্র হারাম নয়'—এই বার্তাটি স্পষ্ট করে বলতে ভয় পান। ফলে তরুণদের একাংশ বিভ্রান্ত হয়ে যায়, যারা ধর্মীয় আবেগে গণতন্ত্রকে “কুফরি” বলে মনে করে।

তারিক মাসুদের মতে, খেলাফতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে যদি কেউ সশস্ত্র পন্থায় খেলাফত কায়েম করতে চায়, তবে তাতে রক্তপাত, যুদ্ধ, অরাজকতা ঘটতে পারে—যার ফলাফল হতে পারে সম্পূর্ণ ধ্বংস। “বাস্তবতা দেখতে শিখুন,” বলেন তিনি। “গণতন্ত্রের মধ্যেই জবাবদিহিতা ও প্রতিবাদের সুযোগ থাকে। স্বৈরতন্ত্রে তো সেটাও থাকে না।”

তারিক মাসুদ আরও বলেন, বাংলাদেশে আলেমদের জন্য ভিসা পাওয়া কঠিন ছিল একসময়। জনগণের আন্দোলনের ফলেই এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। “এই পরিবর্তনের কারণেই আমি আজ বাংলাদেশে এসেছি,”—বলেন তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, তারিক মাসুদের এ বক্তব্য বাংলাদেশে ইসলাম ও রাজনীতি নিয়ে চলমান বিভ্রান্তি নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের জন্য বাস্তবধর্মী একটি পাঠও হয়ে উঠতে পারে।

রিফাত

×