
ছবি: প্রতীকী
যারা প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠেন, তাদের জীবনযাত্রায় কিছু অভ্যাস স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। এই অভ্যাসগুলো শুধু তাদের সফল হতে সাহায্য করে না, বরং তাদের মন-মেজাজ, শরীর এবং চিন্তা-ভাবনাকেও অনেক বেশি গঠনতন্ত্র করে তোলে। ভোরবেলার এই সময়টা পৃথিবীর সবচেয়ে শান্ত ও নির্মল সময়। যারা এই সময়ে জেগে ওঠেন, তারা অনেক বেশি সুচিন্তিত, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও আত্মনির্ভর হয়ে ওঠেন।
প্রথমেই বলতে হয়, যারা ভোরে ওঠেন, তারা রাতে ঘুমাতে যান বেশ আগে। তারা রাত জেগে ফেসবুক বা ইউটিউব ঘাঁটেন না। তারা জানেন, ভালোভাবে দিন শুরু করতে হলে ভালোভাবে রাত শেষ করতে হয়। তাই তারা এক নিয়মিত ঘুমের সময় অনুসরণ করেন এবং ঘুমের আগে মোবাইল বা টিভি এড়িয়ে চলে। এই অভ্যাস তাদের ঘুমকে গভীর ও আরামদায়ক করে তোলে, ফলে তারা সকালে সহজেই ঘুম ভাঙাতে সক্ষম হন।
ভোর ৫টায় ওঠা মানুষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হলো, তারা সকাল শুরু করেন নির্দিষ্ট এক রুটিন দিয়ে। কেউ কেউ যোগব্যায়াম করেন, কেউ হালকা এক্সারসাইজ, আবার কেউ ধ্যান বা মেডিটেশন করেন। এই সময়টা তারা নিজেদের মানসিক শান্তি এবং শারীরিক ফিটনেসের জন্য ব্যয় করেন। অনেকেই তখন কাগজ-কলম হাতে নিয়ে দিনের পরিকল্পনা করে ফেলেন। কোন কাজ কখন করবেন, কোনটা আগে দরকারি— এসব ঠিক করে নেওয়ার ফলে দিনটা চলে যায় অনেক বেশি কার্যকরভাবে।
এছাড়া যারা খুব সকালে জাগেন, তারা সময়ের মূল্য অনেক ভালো বোঝেন। তারা জানেন, সকাল ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সময়টা এমন এক পরিপূর্ণ সুযোগ, যখন বাইরের পৃথিবী নীরব থাকে, ফোন বেজে ওঠে না, কেউ ডিস্টার্ব করে না—এই সময়টা পুরোটা নিজেকে দিতে পারেন। তাই এই সময়টাতে তারা বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা, লেখালেখি, গবেষণা বা সৃজনশীল কোনো কাজ করেন। এটাও তাদের একটা বড় অভ্যাস—তারা দিনের সবচেয়ে নির্মল সময়টাকে নষ্ট করেন না, কাজে লাগান।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, ভোরে ওঠা মানুষদের খাদ্যাভ্যাস। তারা সকালে প্রচুর পানি পান করেন, হালকা স্বাস্থ্যকর নাস্তা করেন এবং সারা দিনে খাদ্য গ্রহণে সচেতন থাকেন। সকালেই যখন শরীর ও মন চাঙা থাকে, তখন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ তাদের আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। তারা জানেন, শরীর সুস্থ না থাকলে মন ভালো থাকবে না, আর মন ভালো না থাকলে কোনো কাজেই মন বসবে না।
তারা সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় অপচয় করেন না। দিনের শুরুটা তারা নিজের জন্য রাখেন, অন্যের জন্য নয়। এই অভ্যাস তাদের ফোকাস ধরে রাখতে সাহায্য করে। তারা নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করেন না, বরং নিজের আগের দিনের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে উন্নতি খোঁজেন।
ভোরে ওঠা মানুষদের মধ্যে আরেকটি দারুণ গুণ হলো—তারা জীবনে ছোট ছোট জিনিসে আনন্দ খুঁজে পান। পাখির ডাক, সূর্যোদয়ের রং, সকালের হাওয়া—এসব তাদের প্রাণ ভরে দেয়। এই অভ্যাস তাদের মনকে রাখে ফ্রেশ এবং আশাবাদী। ফলে তারা সারাদিন জুড়ে অন্যদের তুলনায় বেশি হাসিখুশি থাকেন।
সবচেয়ে বড় যে অভ্যাসটি তাদের মধ্যে দেখা যায়, তা হলো—নিজেকে প্রতিনিয়ত উন্নত করার ইচ্ছা। তারা সময়কে একেকটি সিঁড়ি মনে করেন, যার ওপর ভর করে উপরের দিকে উঠতে হয়। তারা অলসতায় বিশ্বাসী নন। তারা জানেন, প্রতিদিন একটু একটু করে এগোলেই বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব। এই মানসিকতা তাদের শুধু কর্মঠই নয়, বরং দায়িত্বশীল এবং অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষ হিসেবেও গড়ে তোলে।
সবশেষে বলা যায়, ভোরে ওঠা মানুষের অভ্যাসগুলো কেবল তাদের সফলতা এনে দেয় না, বরং একটি ভারসাম্যপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ এবং আত্মনির্ভর জীবন গড়তেও সাহায্য করে। এই অভ্যাসগুলো যেকোনো মানুষ নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারলে ধীরে ধীরে জীবন অনেকটাই বদলে যাবে— ভালো দিকেই।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এম.কে.