
ছবি: সংগৃহীত
চীনের নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র 'ফেথিয়েন টু' এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দেশটাকে শত্রু বা প্রতিপক্ষ মনে করা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র ঘিরে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ। ভারতের সংবাদমাধ্যম India.com জানিয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র, নেটো, জাপান ও তাইওয়ান—সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চীনের এই অভাবনীয় সামরিক উন্নয়ন। আর ভারত তো পড়েছে সরাসরি দুশ্চিন্তায়।
শুধু ক্ষেপণাস্ত্র নয়, এটি তার চেয়েও বেশি!
ফেথিয়েন টু কেবল একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রই নয়—বরং সেটার চেয়ে বেশি কিছু। অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রের মতো শুধু আঘাত করে ধ্বংস হয়ে যায় না এটি। বরং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে ফিরেও আসতে পারে, এমনকি পুনর্ব্যবহারও সম্ভব। একে বলা হচ্ছে 'রিকভারেবল হাইপারসনিক উইপন'।
এই ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬,১৭৪ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১.৭ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে সক্ষম। এটি র্যামজেট, স্ক্র্যামজেট ও ডাক্টযুক্ত প্রযুক্তির সংমিশ্রণে তৈরি একটি আরবিসি ইঞ্জিনযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র। প্রথমে এটি রকেটের মতো উৎক্ষেপিত হয়, তারপর মাঝপথে গ্লাইড করে নিজ লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হয়। এর বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এটি পরিচালনায় তরল অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না, বরং এটি চলে কেরোসিন ও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডে।
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কাছে ফেথিয়েন টু ‘দানব’
ফেথিয়েন টু-র মুখোমুখি দাঁড়াতে গিয়ে ভারতীয় সামরিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উঠেছে শঙ্কা। India.com তাদের প্রতিবেদনে তুলনা করে বলেছে, ভারতের বিমান বাহিনীর হাতে থাকা 'আস্রা এমকে' ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা সর্বোচ্চ ৪০০ কিলোমিটার। অচিরেই বাহিনীতে আসছে 'আস্রা এমকে-২' ও 'এমকে-৩', কিন্তু এসবই ফেথিয়েন টু-এর এক হাজার কিলোমিটার পাল্লার তুলনায় নগণ্য। শুধু পাল্লাই নয়—প্রযুক্তির দিক দিয়েও ফেথিয়েন টু-এর সামনে এগুলো শিশুসম।
এমন কোনো প্রতিরক্ষা নেই যা একে ঠেকাতে পারে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ফেথিয়েন টু-এর ক্ষমতা বাস্তবে প্রমাণিত হয়, তবে এটি প্রতিরোধ করার মতো এখনো কোনো কার্যকর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। এমনকি একে শনাক্ত করার মতো রাডার ব্যবস্থাও এখনো তৈরি হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে। একে "ডিফেন্স ব্রেকার" হিসেবেই বিবেচনা করছেন সমরবিদেরা।
নিষিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এল এই প্রযুক্তি!
সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে—এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে নর্থ ওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, যেটির উপর ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য ভিসা পান না, এমনকি গবেষণা সহযোগিতা বন্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবুও এত জটিল ও উন্নত প্রযুক্তি কীভাবে তৈরি হলো—তা নিয়ে চলছে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা।
ফেথিয়েন টু নির্মাণে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তির উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে—হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত চীনের মোট ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই "উন্নত কম্পিউটিং এবং এমআই প্রযুক্তি" ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। তারপরও কীভাবে এত দ্রুত এমন শক্তিশালী ও বহুমুখী কার্যক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করল চীন—এটি এখন বিশ্বের বড় সামরিক ধাঁধা।
শেখ ফরিদ