
ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের লাগাতার ড্রোন হামলার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার উদ্বেগে রোববার (২৭ জুলাই) নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে বরাবরের মতো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন থেকে সরে এসেছে রাশিয়া। সেন্ট পিটার্সবার্গ, বাল্টিক উপকূলবর্তী কালিনিনগ্রাদ অঞ্চল ও বন্দনগরী ভ্লাদিভোস্তকে যুদ্ধজাহাজের কুচকাওয়াজ বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘পুরো পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা বিবেচনায় কুচকাওয়াজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’ যদিও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজ শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে নৌবাহিনী সদর দপ্তরে পৌঁছেছেন, তবুও সেখানে কোনো বড় অনুষ্ঠান হয়নি।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবার রাতভর বিভিন্ন অঞ্চলে ইউক্রেনের ছোড়া ৯৯টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। দিনের বেলায়ও সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছাকাছি আরও কয়েকটি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, লোমোনোসভ অঞ্চলে একটি ড্রোনের ধ্বংসাবশেষে এক নারী আহত হয়েছেন। একই কারণে রোববার সকালে পুলকোভো বিমানবন্দরে বহু ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
পুতিন সফরে গিয়ে ঐতিহাসিক অ্যাডমিরালটি ভবনে চার দিনের ‘জুলাই স্টর্ম’ মহড়ার প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। এই মহড়ায় বাল্টিক থেকে প্যাসিফিক পর্যন্ত ১৫০টি যুদ্ধজাহাজ অংশ নেয়। পুতিন বলেন, ‘নৌবাহিনীর আক্রমণক্ষমতা ও লড়াইয়ের সক্ষমতা একটি নতুন গুণগত স্তরে উন্নীত হবে।’ তিনি আরও যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ ও প্রশিক্ষণ জোরদারের প্রতিশ্রুতি দেন।
ইউক্রেনের ড্রোন কৌশল রাশিয়ার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ
নৌবাহিনী দিবসের আড়ম্বর হ্রাস রাশিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং ইউক্রেনের আধুনিক ড্রোন হামলার ভয়াবহতা প্রতিফলিত করছে। যুদ্ধের চতুর্থ বছরে প্রবেশ করায়, ইউক্রেনীয় বাহিনীর একাধিক সাহসী হামলায় রাশিয়ার নৌ ও বিমান সক্ষমতা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।
ব্ল্যাক সি-তে রুশ নৌবাহিনীর একাধিক জাহাজ ধ্বংস করে ইউক্রেন কেবল মস্কোর সক্ষমতা কমিয়ে দেয়নি, বরং রাশিয়াকে দখলকৃত ক্রিমিয়া থেকে নভোরোসিস্কে তার বহর সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে।
চলতি বছরের ১ জুন ‘স্পাইডারওয়েব’ নামক এক দুঃসাহসিক ড্রোন অভিযানে ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার উত্তর সাইবেরিয়া থেকে শুরু করে উত্তর মেরু অঞ্চলের কোলা উপদ্বীপ পর্যন্ত একাধিক বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায়। ট্রাকে বসানো ড্রোন গোপনে মোতায়েন করে অভিযান চালানো হয়, যাতে রুশ সেনাবাহিনী একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে যায়।
ওই হামলায় মস্কোর ইউক্রেন অভিযানে ব্যবহৃত বহু বোমারু বিমান ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য এক বড় মনোবল বৃদ্ধির ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন ফ্রন্টলাইনে ইউক্রেনীয় বাহিনী জনবল ও অস্ত্রের অভাবে চাপে রয়েছে।
পাল্টা হামলায় ইউক্রেনও ক্ষতির শিকার
এদিকে, রোববারও রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুমি শহরে একটি ড্রোন হামলায় বেসামরিক অবকাঠামো, একটি প্রশাসনিক ভবন ও অন্যান্য স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। একই অঞ্চলে একটি ল্যান্ডমাইনে বিস্ফোরণে দুই ব্যক্তি নিহত এবং অপর এক নারী ড্রোনের আঘাতে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসন।
রাশিয়ার এই কৌশলগত আক্রমণ ও ইউক্রেনের পাল্টা ড্রোন হামলা—উভয়ই বর্তমান যুদ্ধের নতুন ধারা হিসেবে উঠে আসছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ সংঘাতের ধরন সম্পর্কে নতুন বার্তা দিচ্ছে।
সূত্র: এপি।
রাকিব