
ছবি: সংগৃহীত
দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ বলেছেন, ‘আমার কেন মৃত্যু হলো না? এটা নিয়ে অনেকের আফসোস! আমার ঘরানার লোকদের অনেকের এটা নিয়ে আফসোস আছে, এটা আমি এখন বুঝি। তারা প্রতিনিয়ত আমার মৃত্যু কামনা করে।’
আর জে টুটুলের উপস্থাপনায় জুলাই যোদ্ধাদের বাস্তব জীবনের ঘটনা নিয়ে নির্মিত ‘লাল জুলাইয়ের গল্প’-এর ২৪তম পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে মাবরুর রশিদ বান্নাহ এমন মন্তব্য করেছেন।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান চলাকালীন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বান্নাহ আরও বলেন, ‘আমাকে ধরতে আমার অফিসে যুবলীগের লোকজন এসেছে, ছাত্রলীগে লোকজন রামদা নিয়ে এসেছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি তখন ওখানে ছিলাম না। আমাকে কিন্তু তুলে নিয়ে গিয়ে গায়েব করে দেওয়ার কথা ছিলো। লেখালেখি বন্ধ করতে আমাকে বিভিন্ন পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হতো, আমি ধারাবাহিকভাবে হুমকির মধ্যে ছিলাম।’
মাবরুর রশিদ বান্নাহ বলেন, ‘জীবনের মায়া তো সবারই আছে, মরতে কার ভালো লাগে? কিন্তু জুলাই আমাকে সেই শক্তিটা দিয়েছে। বলার মতো জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া আমার অনেক গল্প আছে। সাতটা দিন আমি বাসার বাইরে পালিয়ে পালিয়ে ছিলাম, এটা কখনোই আমি সেভাবে প্রকাশ করিনি।’
‘ওই সময়টা কেমন কেটেছে’ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি একটা ছোট ভাইয়ের বাসায় পালিয়ে পালিয়ে থাকতাম, তবে রাতের বেলা থাকতে পারতাম না।’
‘আমি মনে করি আমার সাহস অনেক কম। যখন আমি আবু সাঈদকে দেখি, যখন আমি মুগ্ধকে দেখি, ওই তুলনায় আমার নিজের নগণ্য মনে হয়। জুলাই শহীদদের তুলনায় আমি কোনো সাহসী ব্যক্তি না আমি, আমি অত্যন্ত ভীতু একটা ব্যক্তি।’
বান্নাহ আরও বলেন, ‘হাসিনার পক্ষের কোনো লোককে আমি এখন পর্যন্ত ন্যূনতম সরিটুকু হতে দেখিনি যে, এটা মনে হয় অনেক বড় ভুল হয়ে গেলো, এতগুলো মানুষকে এভাবে মারা ঠিক হলো না। তারা এখনো বিশ্বাস করে এটা সাবোটাজ। মেটিকুলাসলি ডিজাইনড বলা হলেও শব্দটি কোনোভাবে নেতিবাচক অর্থ বহন করে না। এটা তো খুবই ভালো, আন্দোলনটিকে চমৎকারভাবে বেগবান করে তারা এটাকে সফল করেছে।’
‘হাসিনার মতো অত্যাচারী শাসক, যে কথাই বলে বন্দুকের ভাষায়, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, হাসিনার বডিগার্ড অস্ত্র ব্যবহার করেছে, হাসিনা তো মরণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার হুকুম দিয়েছিল, এটা তো আল জাজিরার প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, এটা তো প্রমাণিত। যে নেত্রী অস্ত্র সরাসরি অস্ত্র ব্যবহার করতে চায়, তার বিপরীতে সেখানে কমপক্ষে লাঠি ব্যবহার আর ইট-পাটকেল মারা হবে না?’
তিনি বলেন, ‘এখন লাঠি আর ইটা মারা যদি মেটিকুলাসলি ডিজাইনড হয়ে থাকে, তাহলে সেটার জন্য আমি গর্বিত। আমাদের জুলাই যোদ্ধা কোন ভাইটার হাতে অস্ত্র দেখা গেছে? বেশিরভাগই খালি হাতে ছিলো। আমরা যারা অনলাইনে লেখালেখি করেছি, আমাদের হাতে কী ছিলো, আমাদের কি কোনো নিরাপত্তা ছিলো? এই প্রশ্ন কি কেউ করে? পুরো মিডিয়া সেক্টরের কয়জন মানুষ আন্দোলনের পক্ষে ছিলো, হাতে গুনে বলা যাবে। জনগণ জানে সেটা। আমি কী করেছি, সেটাও জনগণ বলবে।’
‘আমি আমার জায়গা থেকে ধারাবাহিকভাবে লিখে গেছি, কাজ করে গেছি। আমি কারো কাছে কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করি না। যদি দিতে হয়, জনগণ যদি আমার কাছে কৈফিয়ত চায়, আমি অবশ্যই দেব, সমস্যা নেই।’
সূত্র: https://www.facebook.com/share/1DtsuK1yKo/
রাকিব