ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

সংস্কৃতি সংবাদ

গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নাটক ‘নিমজ্জন’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৭ জুলাই ২০২৫

গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নাটক ‘নিমজ্জন’

শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে রবিবার মঞ্চস্থ নিমজ্জন নাটকের দৃশ্য

শুধুমাত্র দর্শককে বিনোদিত করাই মঞ্চনাটকের উদ্দেশ্য। থিয়েটারের ধর্মই হচ্ছে সমাজ, রাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের অসংগতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন জাগিয়ে তোলা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিল্পিত প্রতিবাদে জ্বলে ওঠা। মঞ্চের আলো-আঁধারীর খেলায় সংলাপের আশ্রয়ে ভূলুণ্ঠিত মানবতার পক্ষে অবস্থান নেওয়া। 
আর তেমনই এক  নাটক ‘নিমজ্জন’। বিশ্বের সকল গণহত্যাকে উপজীব্য করে তার বিরুদ্ধে মানবতার বক্তব্য নিয়ে নির্মিত  হয়েছে নাটকটি। সেই সুবাদে ঢাকা থিয়েটার প্রযোজিত এই নাটকে গণহত্যাকারীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে। উল্টোদিকে গণহত্যার বিরুদ্ধে গাওয়া হয়েছে মানবিকতার জয়গান। প্রয়াত নাট্যকার সেলিম আল দীন রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ। 
রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে দর্শকসমাদৃত প্রযোজনাটির প্রদর্শনী হয়।  
এ প্রসঙ্গে নির্দেশক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, যুগে যুগে কালে কালে এই পৃথিবীতে অসংখ্য গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক মতবাদের জের ধরে কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতায় ধরে রাখতে নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।  সেই বাস্তবতায় মানবতার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া সেসব গণহত্যার বিরুদ্ধে এটি একটি প্রতিবাদী প্রযোজনা। একইসঙ্গে প্রযোজনাটি সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। কারণ, গণহত্যার বিভিন্ন নৃশংস ঘটনা নাটকে তুলে ধরে শিল্পের আশ্রয়ে মানবতার আর্তি জানানো হয়েছে। 
নাটকটির গল্প আবৃত হয়েছে বিশ্ব গণহত্যার ঘটমান কাহিনী ও দৃশ্যচিত্রের সমন্বয়ে। বিশ্ব পরিভ্রমণ শেষে এক আগন্তুক মৃত্যুশয্যায় শায়িত বন্ধুর কাছে আসবে বলে ত্রিনদীর মোহনায় গড়ে ওঠা এক শহরে এসে উপস্থিত হয়। বন্ধুটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক।  রাজনৈতিক মতবাদের  কারণে  সেই শহরে ব্যাপক নির্যাতন ও গণহত্যার ঘটনা ঘটে।  
সেই আগন্তুক ট্রেন থেকে স্টেশনে  নেমে একে একে দেখতে পায় এক কুলির ঝুলন্ত লাশ, অদ্ভুতদর্শন এক বৃদ্ধ, স্টিমারে হলোকাস্ট, নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসা এক রূপসী নারী।

আগন্তুক আরও  দেখতে পায়, বরফের চাঙড়ের ছড়িয়ে রয়েছে  অসংখ্য শিশুর লাশ। সেখানে আরো আছে ধর্ষণের পর জিভ কেটে নেওয়া এক শিশুর লাশ, কান্দাহারের মমি, মাদ্রিদের গণহত্যা, চিলির কবি নেরুদার ফিন্দেমুন্দোর শোকগীতি, স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রায়  দেড় হাজার দর্শক ক্ষুুরের আঘাতে খুন হয়েছে।  
ত্রিশ হাজার টন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টিএনটির বিস্ফোরণে ষোলো কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুস্তরে আগুন ধরে যাওয়া শহরটির ক্রম নিমজ্জন দেখতে পায় ওই আগন্তুক। এই গণহত্যার প্রতিবাদে তার কণ্ঠে উচ্চারিত হয় মানবতার বাণী। 
নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন  মিলু চৌধুরী, আসাদুজ্জামান আমান, সিরাজুল ইসলাম, মোস্তাফা রতন, তরিকুল ইসলাম লিটন, রনি হোসাইন, নয়ন হোসাইন, সাজ্জাদ রাজীব, সাঈদ রিংকু, রফিক মোহাম্মদ, সামিউন জাহান দোলা ও সাজ্জাদ রহমান। নাটকটি সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন শিমূল ইউসুফ।

প্যানেল হু

×