
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। যেখানে দেশবিদেশের নানা স্থান থেকে সমুদ্রের নোনাজলে গাঁ ভাসিয়ে মনের মধ্যে প্রশান্তির বাতাস আর মানসিক তৃপ্তি খুঁজতে প্রতিবছর ভিড় জমান হাজার হাজার পর্যটক।
তবে অনেকেই জেনে অবাক হন যে একটি কুয়ার (কূপ) নামে করা হয়েছে স্থানটির নামকরণ। হ্যাঁ সত্যিই, মূলত একটি কুয়ার নামে নামকরণ করা হয়েছে এ স্থানটির।
১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মায়ানমার থেকে এসে পটুয়াখালীতে সমুদ্রের পাড়ে বসতি স্থাপন করেন। সেখানে তাদের পানির প্রয়োজন দেখা দিলে বৌদ্ধ মন্দিরের পাশেই ১৭৮৪ সালে একটি কুয়া খনন করেন। মূলত এই কুয়ার নামেই পরবর্তীতে মানুষের মুখে মুখে স্থানটির নাম হয়ে ওঠে কুয়াকাটা। যা সাগরের নীল জলরাশি, স্থানীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য,সংস্কৃতি ও প্রকৃতির নান্দনিকতায় পরিণত হয় পর্যটন কেন্দ্রে।
দেশবিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসেন কুয়াকাটায়। মনকে সতেজ করতে তারা ঘুরে দেখেন এখানকার সকল পর্যটন স্পটসমূহ। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ই আগ্রহ পোষণ করেন কুয়াকাটা নামের উৎপত্তির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ 'কুয়া' দেখার জন্য।
ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের চৌরাস্তা থেকে হাতের বামদিকে মাত্র ৫০০ মিটার বামদিকে গেলেই অবস্থান কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দিরের। মন্দিরটির প্রবেশ মুখে বামপাশে অবস্থান ঐতিহ্যবাহী এ কুয়ার। কুয়াসহ মন্দিরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে শুরুতেই প্রবেশদ্বার থেকে ২০ টাকা মূল্যের একটি টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। এরপরে ভেতরে প্রবেশ করেই দেখা মিলবে ঐতিহ্যবাহী এ কুয়ার।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ কুয়াটি প্রায় ৩০-৪০ ফুট গভীর ও এর প্রস্থ ৬-৮ ফুট। এখনও যেন কালের সাক্ষী হয়ে আছে এ কুয়া। এর গায়ে একটি ফলক খচিত রয়েছে। যেখানে লেখা রয়েছে, "পানির অপর নাম জীবন,১৭৮৪ সালে রাখাইনরা খাবার পানির জন্য এ কুয়া খনন করেন। এই কুয়ার নামেই বর্তমানে কুয়াকাটা নামকরণ করা হয়।"
পর্যটক বেলাল হোসেন বলেন, "আমরা নাম শুনেছি কুয়াকাটা, কিন্তু আজ জানতে পারলাম এর নামের পেছনের ইতিহাস। ঘুরতে এসে কুয়াটির কথা লোকমুখে শুনেই দেখতে ছুটে এলাম। খুব ই ভালো লাগছে।"
কথা হয় টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করা চোখাইন মারমার সাথে। তিনি জানান, " সমুদ্র দেখার পাশাপাশি প্রতি দিন শত শত দর্শনার্থী এখানে কুয়া দেখতে আসেন। তারা খুব ই আনন্দিত হোন।"
ইতিহাসের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে এখনও টিকে আছে কুয়াকাটার ঐতিহ্য রাখাইনদের খনন করা এ কুয়া, তাই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসলে ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি দর্শন করতে পারেন আপনিও।
Mily