ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ইট-পাথরের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ‘মাটির ঘর’

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ময়মনসিংহ 

প্রকাশিত: ০৩:১৬, ২৮ জুলাই ২০২৫

ইট-পাথরের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ‘মাটির ঘর’

ছবি : সংগৃহীত

পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ জনজীবন ও জনপদ। মানুষ এখন আর আগের মতো খেয়ে পরে বেঁচে থাকার মধ্যে জীবনের প্রাপ্তি খোঁজে না। এখন খাওয়া পরার পাশাপাশি একটি উত্তম বাসস্থানের স্বপ্ন দেখে। ময়মনসিংহের ভালুকায় উপজেলার গ্রামীণ জনজীবনে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। 

গ্রামীণ ঐতিহ্য মাটির ঘর। গ্রামের মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই আজ আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। উন্নত জীবনের আশায় ইট পাথরের পাকা বাসস্থানের পেছনে ছুটছে মানুষ। এতে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য মাটির ঘর। 

একসময় ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা-ত্রিশালসহ ফুলবাড়িয়া গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতেই দেখা মিলতো মাটির ঘরের। তবে নগরজীবনের ছোঁয়া লেগেছে এ এলাকার বাসিন্দাদের ওপর। আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে পাল্লাদিয়ে জীবনমান উন্নয়নে ইট পাথরের বাসস্থান তৈরিতে ব্যস্ত সবাই। মাটির ঘরের জায়গা দখল করে নিয়েছে ইট-পাথরের তৈরি বিল্ডিং বাড়ি । এতে করে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যে। কিছুদিন আগেও ভালুকায়  প্রতিটি বাড়িতেই মাটির ঘর চোখে পড়তো। তবে এখন সেসব ঘরের জায়গা দখল করে নিয়েছে বড় বড় বিল্ডিং বাড়ি ঘরের। 

ফুলবাড়িয়া উপজেলার কালাদহ নিজ পাড়ার বাসিন্দা আরিফুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মাটির ঘরে বসবাস করি। মাটির প্রয়োজনীয় উপকরণ আর শ্রমিক খরচ কমছিল তাই আগে মাটির ঘর বানাতে বেশ আগ্রহী ছিলাম আমরা। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের সময় লাগতো দুই থেকে তিন মাস। কিন্তু বর্তমানে এর চাহিদা না থাকায় কারিগররাও এই পেশা ছেড়ে অন্য অন্য পেশায় জড়িয়ে পরেছে।

জালাল উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, মাটির ঘর গরমের সময় শীতল থাকে। তাই আমরা মাটির ঘরকে গরিবের এসিও বলি। কাদামাটি দিয়ে দেড় থেকে দুই ফুট চওড়া করে ১০ থেকে ১২ ফিট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে টিনের ছাউনি দিয়ে মাটির ঘর তৈরি করা হয়। যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসব এলেই কাদামাটির প্রলেপের মাধ্যমে গৃহিণীদের হাতের ছোঁয়ায় সেই মাটির ঘরের সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ হয়ে যেত। এই মাটির ঘরে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে আরও মজবুত করে তাতে রং বা চুন লাগিয়ে দৃষ্টি নন্দন করতো। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না এটি মাটির ঘর না পাকা দালান বাড়ি।

ফুলবাড়িয়া ময়জান বিবি জনকণ্ঠকে বলেন, ৭০ বছর ধরে মাটির ঘরে বসবাস করছি। এহন তো বয়স হয়েছে, কয়দিন পরে তো মরেই যাব, তাই আমরা মাটির ঘরেই থাকি। আর ছেলে পুত্রের বউ দেয়াল ঘরে থাকে। মাটির ঘরে গরমের সময় গরম লাগে না। শীতের সময় শীত লাগে না। মাটি ঘরে থাকা খুবই আরামদায়ক বলে জানান তিনি।

Mily

×