ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ডেটা সেন্টারের তাপ কমাতে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করছে চীন

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৮ জুলাই ২০২৫

ডেটা সেন্টারের তাপ কমাতে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করছে চীন

ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ক্লাউড কম্পিউটিংসহ ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করতে দ্রুতগতিতে ডেটা সেন্টার নির্মাণে মনোযোগী হচ্ছে চীন। কিন্তু এসব ডেটা সেন্টার বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার গ্যালন পানি ব্যবহার করে গরম হওয়া যন্ত্রপাতি ঠান্ডা রাখতে। ফলে কৃষি ও দৈনন্দিন ব্যবহারসহ মানুষের জীবনধারণে প্রয়োজনীয় পানির সঙ্গে এখন প্রতিযোগিতায় নামছে এই প্রযুক্তি অবকাঠামো।

এই সমস্যা মোকাবিলায় চীন এবার অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করছে—ডেটা সেন্টার সরাসরি স্থাপন করা হচ্ছে সমুদ্রের নিচে। জুন মাসে সাংহাই উপকূল থেকে ছয় মাইল দূরে সমুদ্রের তলদেশে নির্মাণ শুরু হয় এমনই এক ডেটা সেন্টারের, যা চলবে অফশোর উইন্ড ফার্ম থেকে আসা বিদ্যুৎ দিয়ে।

প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা হবে সার্ভার

ডেটা সেন্টারগুলোতে দিনরাত চালু থাকা সার্ভার থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, যা যন্ত্রপাতির ক্ষতি করতে পারে। এই তাপ ঠান্ডা করতে সাধারণত পানি ব্যবহার করা হয়—যা বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বা বাষ্পে পরিণত করে তাপ হ্রাস করা হয়। কিন্তু সমুদ্রের নিচের ডেটা সেন্টারগুলোতে সাগরের পানি ব্যবহার করে রেডিয়েটরের মাধ্যমে এই তাপ শোষণ করে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়।

ছবি: সংগৃহীত

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ‘হাইক্লাউড’ নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠান হাইলানইউন। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র লি লাংপিং জানিয়েছেন, এই ডেটা সেন্টার সাধারণ ডেটা সেন্টারের তুলনায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে। এর ৯৭ শতাংশ বিদ্যুৎ আসবে একটি নিকটবর্তী অফশোর উইন্ড ফার্ম থেকে।

প্রথম পর্যায়ে এখানে স্থাপন করা হবে ১৯৮টি সার্ভার র‍্যাক, যাতে রাখা যাবে প্রায় ৪০০ থেকে ৮০০ এআই-সক্ষম সার্ভার। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই কেন্দ্র চালু হওয়ার কথা।

মাইক্রোসফটের ধারণাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে চীন?

২০১৫ সালে ‘প্রজেক্ট ন্যাটিক’ নামে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় মাইক্রোসফট স্কটল্যান্ডের উপকূলে সমুদ্রের নিচে ডেটা সেন্টার স্থাপন করেছিল। পরীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, পানির নিচে ডেটা সেন্টার নির্ভরযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব। এমনকি এতে কম সংখ্যক সার্ভার নষ্ট হয়েছে, কারণ ক্যাপসুলটি অক্সিজেনহীন নাইট্রোজেন গ্যাসে পূর্ণ ছিল।

তবে মাইক্রোসফট বর্তমানে সেই প্রকল্প স্থগিত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে চীনা প্রতিষ্ঠান হাইলানইউন এখন সেই ধারণাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে বাস্তবায়নের পথে।

হাইলানইউনের আশা, যদি সাংহাইয়ের প্রকল্প সফল হয়, তাহলে তারা চীনা সরকারের সহায়তায় বৃহৎ পরিসরে সমুদ্রতল ডেটা সেন্টার স্থাপনের দিকে অগ্রসর হবে।

পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

তবে সমুদ্রের নিচে ডেটা সেন্টার স্থাপনের ফলে পরিবেশগত কিছু ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এমন ডেটা সেন্টার সমুদ্রের পানিকে সামান্য উষ্ণ করে তুলতে পারে, যা সমুদ্রজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষত সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের সময়। এছাড়া এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কিছু নির্দিষ্ট ধরনের শব্দ প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ডেটা সেন্টারগুলোর ক্ষতি করা সম্ভব, যা সাইবার হামলার নতুন দিক খুলে দিতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত

এই অভিযোগ অস্বীকার করে হাইলানইউন বলেছে, ২০২০ সালে দক্ষিণ চীনের পার্ল রিভারে একটি পরীক্ষামূলক পডের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আশপাশের পানির তাপমাত্রা এক ডিগ্রিরও কম বেড়েছে এবং এতে পরিবেশগত কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ সমুদ্রতলে ডেটা সেন্টার নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে, আর জাপান ও সিঙ্গাপুর ভেসে থাকা ডেটা সেন্টারের পরিকল্পনা করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি এখন প্রস্তুত থাকলেও এই ট্রেন্ড বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে কিনা তা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট দেশের পরিবেশগত নীতিমালা, সাপ্লাই চেইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর—যেখানে চীন এখন অনেকটাই এগিয়ে।

 

সূত্র: https://www.scientificamerican.com/article/china-powers-ai-boom-with-undersea-data-centers/#:~:text=Partly%20to%20address%20water%20concerns,one%20of%20China's%20AI%20hubs.

রাকিব

×