
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের গাজিয়াবাদে ৮ বছর ধরে চালানো একটি নকল দূতাবাস ঘিরে বেরিয়ে এসেছে অবিশ্বাস্য সব তথ্য। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, হর্ষবর্ধন জৈন নামের এক ব্যক্তি অন্তত ১৬২ বার বিদেশ সফর করেছেন, বিদেশে রয়েছে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি ভারতীয় রুপির প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের উত্তরপ্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) তাকে গাজিয়াবাদের একটি ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। ওই বাড়িটিই তিনি দূতাবাস হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা এবং হাওলা চক্রের মাধ্যমে অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছে।
‘দূতাবাসের’ নামে সাজানো ছিল দুই তলা ভবনটি
গাজিয়াবাদের ওই দুই তলা ভবনের সামনে লেখা ছিল ‘Grand Duchy of Westarctica’ এবং ‘H E HV Jain Honorary Consul’। ভারতের ও একটি তথাকথিত দেশ ওয়েস্টার্কটিকার পতাকা উড়তো ভবনটির সামনে।
তদন্তে জানা যায়, জৈন ২০১৭ সাল থেকে এই নকল দূতাবাস চালাচ্ছিলেন। তিনি লোকজনকে বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করতেন। এমনকি নিজের ‘দূতাবাস’-এর সামনে ‘ভাণ্ডারা’ জাতীয় অনুষ্ঠান করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতেন।
অসাধু ধর্মগুরুর সঙ্গে সম্পর্ক
তল্লাশিতে তার বাড়ি থেকে ভারতে বিতর্কিত ‘ধর্মগুরু’ চন্দ্রস্বামী ও সৌদি অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগির সঙ্গে ছবি উদ্ধার করেছে পুলিশ। চন্দ্রস্বামীকে এক সময় ভারতের তিন প্রধানমন্ত্রী—পি ভি নারসিমা রাও, চন্দ্রশেখর ও ভি পি সিংহের ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা হতো।
চন্দ্রস্বামীর মাধ্যমে জৈনের সঙ্গে পরিচয় হয় প্রতারক আহসান আলী সাঈদের। তারা মিলে গড়ে তোলে ২৫টি শেল কোম্পানি, যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করা হয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত আহসান পরবর্তীতে তুরস্কের নাগরিক হন। তিনি সুইজারল্যান্ডে ‘ওয়েস্টার্ন অ্যাডভাইজরি গ্রুপ’ নামে একটি কোম্পানি চালাতেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি কমিশন সংগ্রহ করে প্রতারণা করা হয়।
বাহন, বিলাসবহুল সামগ্রী, কাগজপত্র জব্দ
তল্লাশি চালিয়ে জৈনের কাছ থেকে চারটি নকল কূটনৈতিক নম্বর প্লেটসহ গাড়ি, বিলাসবহুল ঘড়ির সংগ্রহ এবং ভুয়া কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
ওয়েস্টার্কটিকা নামের তথাকথিত মাইক্রোনেশন (কাল্পনিক দেশ) জানিয়েছে, ২০১৬ সালে জৈন অনুদান দেওয়ার পর তাকে ‘Honorary Consul to India’ পদ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কখনো রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হননি। তার তৈরি নম্বর প্লেট, পাসপোর্টসহ অন্যান্য কূটনৈতিক চিহ্ন ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওয়েস্টার্কটিকা।
তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘জৈনের কর্মকাণ্ড আমাদের নীতিমালার লঙ্ঘন। তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আমরা ভারতের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করব।’
ওয়েস্টার্কটিকা কী?
ওয়েস্টার্কটিকা আসলে একটা কাল্পনিক দেশ। ২০০১ সালে ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরি নামের মার্কিন এক নৌ কর্মকর্তা এই দেশ গঠনের দাবি করেন। তিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে ইন্টেলিজেন্স অ্যানালিস্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এর নিজস্ব ওয়েবসাইট, পতাকা, জাতীয় প্রতীক এবং একটা মুদ্রাও রয়েছে।
ওয়েস্টার্কটিকাকে অ্যান্টার্কটিকার বরফাচ্ছাদিত অংশের প্রতিনিধি হিসেবে বর্ণনা করা হয় যার ওপর কোনো দেশের আনুষ্ঠানিক দাবি নেই। কিন্তু বিশ্বের কোনো দেশ বা জাতিসংঘ একে সত্যিকারের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
ওয়েস্টার্কটিকা নামে ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরির তৈরি একটি সংস্থাও রয়েছে। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত যার লক্ষ্য পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো।
ওয়েস্টার্কটিকা ‘সরকারের’ নেতৃত্বে রয়েছেন গ্র্যান্ড ডিউক ট্র্যাভিস, যার সাহায্যের জন্য একজন প্রধানমন্ত্রী এবং 'রয়্যাল কাউন্সিল' রয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব