
ছবি: সংগৃহীত।
একসময় মধ্যবয়সী মানুষের সমস্যাই মনে করা হতো কিডনিতে পাথর হওয়ার বিষয়টি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই রোগ তরুণদের মাঝেও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণ কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত পানি পান, প্রসেসড খাবার খাওয়ার প্রবণতা এবং অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ-এই তিনটি প্রধান কারণের কারণে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
পানিশূন্যতা: মূল কারণ।
তরুণরা আজকাল অফিস কিংবা পড়াশোনার চাপে দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে কাটায়, ফলে পানি পান করার কথা প্রায় ভুলেই যান। বিশেষ করে গরমে পর্যাপ্ত পানি না খেলে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, আর তখনই ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের মতো খনিজ উপাদান কিডনিতে জমে গিয়ে পাথরে পরিণত হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, পর্যাপ্ত পানি পান না করাটা কিডনি পাথরের সবচেয়ে বড় কারণ।
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস।
ফাস্টফুড, অতিরিক্ত লবণ, প্রসেসড খাবার এবং চিনি মেশানো পানীয় তরুণদের খাদ্যতালিকায় প্রায় প্রতিদিনই থাকছে। এসব খাবার প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়া অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন যেমন লাল মাংসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে প্রস্রাবে সাইট্রেট নামক উপাদানের পরিমাণ কমে যায়-যা প্রাকৃতিকভাবে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস ধীরে ধীরে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
জিম সাপ্লিমেন্টের ঝুঁকি।
চোখে পড়ার মতো একটি প্রবণতা হলো তরুণদের মধ্যে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ জিম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের চল। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এসব সাপ্লিমেন্ট অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায় এবং প্রস্রাবের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পাথর তৈরির পরিবেশ তৈরি হয়। বিশেষ করে যখন পানি কম পান করা হয়, তখন এই ঝুঁকি আরও বাড়ে।
উপসর্গগুলো কী?
প্রথমদিকে কিডনিতে পাথরের লক্ষণগুলো হয় মৃদু এবং অনেকেই সেগুলোর গুরুত্ব বোঝেন না। কোমরের পাশে ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে রক্ত দেখা কিংবা ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন-এসবই হতে পারে কিডনিতে পাথর হওয়ার পূর্বাভাস। অনেকে এসব উপসর্গকে পেশী টান বা কাজের চাপে হওয়া সমস্যা মনে করে অবহেলা করেন, যা পরবর্তীতে গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
প্রচলিত ভুল ধারণা:
দুধ খাওয়া পাথরের কারণ-এমন ভুল ধারণা অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, দুধ বা প্রাকৃতিক ক্যালসিয়াম খাবার পেটে থাকা অক্সালেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তা প্রস্রাবে যাওয়ার আগেই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, ফলে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে। আবার অনেকেই মনে করেন কিডনিতে পাথর কেবল বয়স্ক বা পারিবারিক ইতিহাস থাকা ব্যক্তিদের হয়-এটাও ভুল। বর্তমান হাই-স্ট্রেস, লো-হাইড্রেশন জীবনে যেকোনো বয়সেই এই রোগ হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, সময়মতো পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে সচেতনতা এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের প্রধান উপায়।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান