
ছবিঃ সংগৃহীত
আজকাল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে 'সুপারফুড' শব্দটি বেশ পরিচিত। আর এই সুপারফুডের তালিকায় খুব অল্প সময়েই নিজের জায়গা করে নিয়েছে ক্ষুদ্রাকৃতির বীজ চিয়া সিড। প্রাচীন অ্যাজটেক ও মায়া সভ্যতার এই খাবারটি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তার পুষ্টিগুণের জন্য সমাদৃত। ছোট্ট এই বীজের মধ্যে লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার অসাধারণ সব উপাদান। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই ক্ষুদ্র বীজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অসাধারণ সব স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
চিয়া সিড কী?
চিয়া সিড হলো সালভিয়া হিসপানিকা (Salvia hispanica) নামক উদ্ভিদের বীজ। এর আদি নিবাস মেক্সিকো এবং গুয়াতেমালায়। এর সাদা ও কালো উভয় রঙের বীজই পুষ্টিগুণে ভরপুর।
চিয়া সিডের বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা
ছোট্ট এই বীজে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলো শরীরকে নানাভাবে উপকৃত করে।
১. ওজন কমাতে সহায়ক: চিয়া সিডে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার, যা জলে ভিজে ফুলে ওঠে এবং পেটে যাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকার অনুভূতি দেয়। এতে ক্ষুধা কমে যায় এবং অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত সহায়ক।
২. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড) রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর: চিয়া সিডের ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, ফলে রক্তে শর্করার শোষণ ধীরে হয়। এটি হঠাৎ করে ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৪. হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায়: চিয়া সিড ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়ামের চমৎকার উৎস। এই খনিজ উপাদানগুলো হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, চিয়া সিডে দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে।
৫. হজমশক্তি উন্নত করে: উচ্চ ফাইবারযুক্ত হওয়ায় চিয়া সিড কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এটি অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
৬. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর: চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এটি ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ কমাতে এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৭. শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়: প্রোটিন, ফ্যাট এবং ফাইবারের সঠিক সমন্বয়ের কারণে চিয়া সিড খেলে শরীরে দীর্ঘক্ষণ শক্তি বজায় থাকে। ব্যায়াম করার আগে বা সারাদিনের কাজের শুরুতে এটি খেলে কর্মক্ষমতা বাড়ে।
কিভাবে খাবেন চিয়া সিড?
চিয়া সিড খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এটিকে ভিজিয়ে খাওয়া। কারণ ভেজালে এটি তার সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ উন্মুক্ত করে এবং হজম করাও সহজ হয়।
সাধারণ পদ্ধতি: এক গ্লাস জলে বা দুধে ১-২ চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট বা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। এটি ফুলে একটি জেলির মতো মিশ্রণ তৈরি করবে। এরপর এটি পান করুন।
চিয়া পুডিং: দুধ বা দইয়ের সাথে চিয়া সিড, সামান্য মধু বা ম্যাপেল সিরাপ এবং পছন্দের ফল মিশিয়ে সারারাত ফ্রিজে রেখে দিন। সকালে এটি একটি চমৎকার স্বাস্থ্যকর নাস্তা হিসেবে খেতে পারেন।
স্মুদি বা ফলের রসের সাথে: আপনার পছন্দের যেকোনো স্মুদি বা ফলের রসের সাথে এক চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে খেতে পারেন।
সালাদের উপরে: সালাদের ড্রেসিং হিসেবে বা সরাসরি উপরে ছিটিয়েও চিয়া সিড খাওয়া যায়।
ওটস বা দইয়ের সাথে: সকালের নাস্তায় ওটস বা টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেলে এর পুষ্টিগুণ বহুগুণ বেড়ে যায়।
কতটুকু খাবেন এবং সতর্কতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাপ্তবয়স্ক একজন সুস্থ মানুষ দৈনিক ১ থেকে ২ টেবিল চামচ (প্রায় ১৫-২০ গ্রাম) চিয়া সিড খেতে পারেন।
সতর্কতা:
খাওয়া শুরু করার সময় অল্প পরিমাণে (যেমন, ১ চা চামচ) খাওয়া উচিত এবং ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ানো ভালো।
চিয়া সিডে প্রচুর ফাইবার থাকায়, এটি খাওয়ার সাথে সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা আবশ্যক। নইলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
যাদের হজমের সমস্যা, নিম্ন রক্তচাপ বা যারা রক্ত পাতলা করার ঔষধ খান, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিয়া সিড গ্রহণ করা উচিত।
চিয়া সিড কোনো জাদুকরী সমাধান নয়, তবে এটি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার যা আপনার সুষম খাদ্য তালিকার অংশ হতে পারে। সুতরাং, আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অল্প পরিমাণে চিয়া সিড যোগ করে আপনিও পেতে পারেন এর অসাধারণ স্বাস্থ্য সুবিধা এবং এগিয়ে যেতে পারেন সুস্থ জীবনের পথে।
ইমরান