
ছবি: প্রতীকী
পুরুষরা যখন ৪০ বছর বয়স অতিক্রম করেন, তখন তাদের শরীরের ভেতরে অনেক ধরণের পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এই সময়টা এমন এক ধাপ, যেখানে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করালে অনেক রোগ ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে এবং তা বুঝতে বুঝতেই অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই ৪০ পার হওয়ার পর প্রতিটি পুরুষেরই কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত, যাতে আগেভাগেই যেকোনো সমস্যা ধরা পড়ে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
প্রথমেই যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো রক্তচাপ পরীক্ষা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ ধীরে ধীরে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা এমনকি চোখের সমস্যাও তৈরি করতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা খুব জরুরি।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হলো রক্তে সুগার বা গ্লুকোজ মাত্রা মাপা। অনেক সময় কোনো উপসর্গ না থাকলেও ডায়াবেটিস শরীরে থাকতে পারে। বিশেষ করে যাদের পরিবারে আগে থেকে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে, তাদের জন্য এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চোখ, কিডনি, নার্ভ এবং হৃদযন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কোলেস্টেরল টেস্ট করানোও এই বয়সে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা ধমনীতে জমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কোলেস্টেরল পরিমাপের মাধ্যমে জানা যায় HDL (ভাল কোলেস্টেরল), LDL (খারাপ কোলেস্টেরল), ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কতটা রয়েছে। এসবের ভারসাম্য না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা দরকার।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হলো ইসিজি বা হৃদস্পন্দনের টেস্ট। হার্টের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো গড়বড় হলে এই টেস্টে তা ধরা পড়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কিছুটা কমে আসে। অনিয়মিত হার্টবিট, বুক ধড়ফড় করা বা বুক ধরা ধরা লাগা এই টেস্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যায়।
কিডনি ফাংশন টেস্ট বা রেনাল প্রোফাইলও করানো দরকার। রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনি ঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা জানা যায়। অনেক সময় ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করে কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। তাই নিয়মিত পরীক্ষা করলেই আগেভাগে চিকিৎসা করা সম্ভব।
লিভার ফাংশন টেস্ট বা লিভারের কার্যকারিতা যাচাই করাও জরুরি। লিভারের সমস্যা অনেক সময় ধরা পড়ে না, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি জন্ডিস, হেপাটাইটিস বা সিরোসিসের মতো জটিল রোগে রূপ নিতে পারে। নিয়মিত লিভার পরীক্ষা করালে লিভার এনজাইমের মাত্রা, বিলিরুবিন বা অন্যান্য উপাদানের মাত্রা জানা যায়।
৪০ বছর বয়সের পর পুরুষদের পিএসএ টেস্ট অর্থাৎ প্রোস্টেট নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও করানো প্রয়োজন। এই টেস্টের মাধ্যমে প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি আছে কি না, তা শনাক্ত করা যায়। প্রোস্টেট ক্যানসার পুরুষদের মধ্যে এক সাধারণ ক্যানসার, এবং প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সফলভাবে চিকিৎসা সম্ভব।
এছাড়া অনেক সময় ৪০ পেরোনোর পর চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা বা ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চোখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও এই বয়সে দরকার। চশমার পাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে কি না, চোখে কোনো ছানি জমেছে কি না বা গ্লুকোমার ঝুঁকি আছে কি না, তা জানার জন্য চোখের টেস্ট জরুরি। একইভাবে দাঁতের মাড়ি, ফাঁকা জায়গায় প্লাক বা ইনফেকশন হয়েছে কি না, সেটাও নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে বোঝা যায়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হরমোনের পরিবর্তনও হতে থাকে। অনেক সময় পুরুষ হরমোন টেস্ট, যেমন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। হরমোনের ভারসাম্য হারালে ক্লান্তি, যৌন ক্ষমতায় পরিবর্তন, মেজাজ খারাপ হওয়া বা ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪০ বছর বয়সের পর একজন পুরুষের শরীর যতটা না বাহ্যিকভাবে বদলায়, তার চেয়ে অনেক বেশি বদলায় ভেতরে। এসব পরিবর্তন যদি নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে নজরে রাখা যায়, তবে বড় কোনো রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
তাই এই বয়স থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষাকে উপেক্ষা না করে বরং জীবনের এক নিয়মিত অংশ হিসেবে গ্রহণ করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের পাশাপাশি এসব পরীক্ষাগুলো সময়মতো করানো একজন পুরুষকে দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন পেতে সহায়তা করবে।
এম.কে.