
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে অনেক তরুণের মধ্যেই শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে হাইপারইউরিসেমিয়া বলা হয়। সাধারণত শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করলে বা প্রস্রাবের মাধ্যমে এটি যথাযথভাবে বের না হলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
প্রথমদিকে এর কোনো লক্ষণ স্পষ্টভাবে না বোঝা যাওয়ায় অনেক সময়ই বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়। অথচ ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা দীর্ঘ সময় ধরে বেশি থাকলে তা গেঁটে বাত, কিডনিতে পাথর, এমনকি জয়েন্ট ও কিডনির স্থায়ী ক্ষতির কারণও হতে পারে। তাই শুরুর দিকেই লক্ষণগুলো চিনে নেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
চলুন জেনে নিই ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আগাম সংকেত—
১. হঠাৎ করে জয়েন্টে তীব্র ব্যথা (বিশেষ করে বুড়ো আঙুলে)
শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার প্রথম এবং সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণ হলো হঠাৎ তীব্র জয়েন্ট ব্যথা— যা সাধারণত পায়ের বড় আঙুলে হয়ে থাকে। এই ব্যথা অনেক সময় রাতে শুরু হয়, হঠাৎ করে তীব্র হয় এবং সেই সঙ্গে লালচে ভাব বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। মূলত জয়েন্টে ইউরিক অ্যাসিডের স্ফটিক জমে গিয়ে এ ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি করে।
২. জয়েন্টে ফোলাভাব ও লালচে ভাব
গেঁটে বাতের আরও একটি ক্লাসিক লক্ষণ হলো জয়েন্টে হালকা ফোলা, উষ্ণতা ও লালচে ভাব। যদিও ব্যথা তীব্র না-ও হতে পারে, তবুও এ ধরনের পরিবর্তন ইউরিক অ্যাসিড জমার প্রাথমিক ইঙ্গিত দেয়।
৩. দুর্বলতা ও অতিরিক্ত ক্লান্তি
কোনো কারণ ছাড়াই যদি অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করেন, তবে তা ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণে হতে পারে। শরীরের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ শক্তি শুষে নিতে পারে এবং প্রতিদিনের কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে।
৪. ঘন ঘন প্রস্রাব বা প্রস্রাবে অস্বাভাবিকতা
প্রস্রাবের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া বা রাতের বেলায় ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির একটি লক্ষণ হতে পারে। প্রস্রাব যদি ঘোলা, গন্ধযুক্ত, গাঢ় রঙের হয় বা রক্ত দেখা দেয়, তবে তা আরও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় ইউরিক অ্যাসিড অতিরিক্ত হয়ে গেছে।
৫. পেশিতে শক্তভাব বা ব্যথা
সকালবেলা পেশিতে অস্বাভাবিক শক্তভাব বা হালকা ব্যথা অনুভব করলে তা ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির অপ্রত্যক্ষ লক্ষণ হতে পারে। যদিও এটি জয়েন্ট ব্যথার মতো তীব্র নয়, তবে দৈনন্দিন চলাফেরায় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
৬. ত্বকে সমস্যা বা খোসপাঁচড়া
কখনও কখনও ত্বকের উপরে ইউরিক অ্যাসিড জমে চুলকানি, খোসপাঁচড়া বা খসখসে ভাব দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদি গেঁটে বাত থাকলে ত্বকের নিচে কঠিন গোটা (টোফাই) পর্যন্ত তৈরি হতে পারে।
৭. হালকা জ্বর ও অস্বস্তি
অনেক সময় শরীরে কোনো দৃশ্যমান সংক্রমণ না থাকলেও হালকা জ্বর বা অস্বস্তি অনুভূত হয়। এটি ইউরিক অ্যাসিড সৃষ্ট প্রদাহের কারণেও হতে পারে। বিশেষ করে যখন জয়েন্টে ব্যথা বা ফোলাভাব থাকে, তখন এই জ্বর আরও গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা ধীরে ধীরে গুরুতর হতে পারে, তাই প্রাথমিক লক্ষণগুলোর প্রতি সচেতন হওয়া জরুরি। যেকোনো উপসর্গ দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব