
ছবি: জনকণ্ঠ
ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে, শৈলকুপা উপজেলার কুমার নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা— শৈলকুপার শাহী মসজিদ। সুলতানি আমলের এই স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন এখন দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী এখানে আসেন। অনেকে মানত করতেও আসেন, আর প্রতি শুক্রবার এখানে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
সুলতানি ইতিহাসের ছাপ
ইতিহাসবিদদের মতে, ১৫১৯ সালে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পুত্র নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ পিতার মৃত্যুর পর বাংলার সিংহাসনে আসীন হন। তিনি ১৫৩২ সাল পর্যন্ত গৌড় থেকে ঢাকায় যাতায়াতের পথে কয়েকবার শৈলকুপায় অবস্থান করেন। তার সঙ্গী ছিলেন আরবদেশীয় ধর্মপ্রচারক শাহ আরব ও সৈয়দ আব্দুল কাদের বাগদাদী। পরে তারা শৈলকুপাতেই ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
ধারণা করা হয়, নুসরত শাহের নির্দেশে শাহ আরব একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজকের শৈলকুপা শাহী মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটি শৈলকুপা উপজেলার দরগাপাড়া এলাকায় অবস্থিত। মসজিদের স্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সুলতান নুসরত শাহ কয়েকশ বিঘা জমি ওয়াকফ করে দেন।
নির্মাণ রহস্য ও স্থাপত্যশৈলী
এ মসজিদকে ঘিরে জনশ্রুতি রয়েছে— মসজিদটি নাকি এক রাতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও ইতিহাসবিদরা একে কল্পনামাত্র বলেই মনে করেন। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, এটি একসময় জঙ্গলের ভিতর ছিল, যা পরবর্তীতে পরিষ্কার করার সময় আবিষ্কৃত হয়। সম্ভবত সেই কারণেই এক রাতের মসজিদ নামে প্রচলিত।
মসজিদের স্থাপত্যরূপ সত্যিই চমৎকার। এটি নির্মিত হয়েছে দুটি বৃহৎ পাথরের বিমের উপর। ছয়টি বিশালাকৃতির গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটির দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ ফুট। রয়েছে সাতটি প্রবেশপথ এবং চার কোণে চারটি গোলাকার মিনার, যা সুলতানি আমলের স্থাপত্যরীতির পরিচয় বহন করে।
ধর্মীয় গুরুত্ব ও পরিবেশ
মসজিদের চারপাশজুড়ে ঘেরা রয়েছে সুবিস্তৃত প্রাচীর, সামনে রয়েছে ঈদগাহ মাঠ এবং উত্তরে একটি বড় পুকুর। পেছনে রয়েছে কবরস্থান ও মাজার। মসজিদের পূর্ব পাশে অবস্থিত একটি পবিত্র মাজারে দু’জন ধর্মপ্রচারকের কবর রয়েছে। সেই দু’জন হলেন শাহ সৈয়দ আরেফ রাব্বানী (আরব শাহ) শাহ সৈয়দ আব্দুল কাদের বাগদাদী।
বর্তমান খতিব ও ইমাম আনোয়ার হোসেন জানান, মসজিদটি কোন নির্দিষ্ট সালে নির্মিত হয়েছে তার নির্ভরযোগ্য দলিল না থাকলেও এর স্থাপত্যশৈলী ও ইতিহাস একে সুলতানি আমলের নিদর্শন হিসেবেই চিহ্নিত করে। মসজিদটি এখনো নামাজ আদায়ের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এটি এলাকাবাসীর ধর্মীয় আবেগের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
শৈলকুপার শাহী মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রাচীন বাংলার স্থাপত্যের এক গৌরবময় সাক্ষী।
শিহাব