
এখন আর আগের মতো নেই মানসিক রোগীদের আনাগোনা
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা গ্রামে ১৫০ বছরের নিশি বৈদ্যের পাগলা গারদ এখন বিলুপ্তির পথে। চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভেতরে গেলেই দেখা যায় প্রাচীন এই পাগলা গারদ খানাটি। তবে এখন আর আগের মতো নেই মানসিক রোগিদের আনাগোনা। চিকিৎসার জন্য অনেক গুলো ঘর থাকলেও বর্তমানে তা ব্যবহারের উপযোগী না। পাগলা গারদটি এখন অস্তিত্ব সংকটে।
জানা যায়, ১৮৮০ সালের দিকে প্রায় ১০ একর জমির উপর তৎকালীন কবিরাজ গিরিন্দ্র চন্দ্র দাশ তার গ্রামের নিজ বাড়িতে আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান ‘কমলা ঔষধালয় ‘ও তৎসংলগ্ন পাগলা গারদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তৎকালীন কবিরাজ পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যেকটা অঞ্চলে আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন, যাতে মানুষ সহজে সেবা নিতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন রোগীদের এখানে এনে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। পরে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
সেই থেকে এটি নিশি বৈদ্যের বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাছাড়া, নিশি বৈদ্য তার দুই সন্তান, চিত্ত রঞ্জন দাশ ও জীব রঞ্জন দাশের নামেও আরো ২ টি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। দামোদর ঔষধালয় ও কমলা ঔষধালয়। পরবর্তীতেই তাদের বংশের লোকেরা এটি পরিচালনা করেছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, নিশি বৈদ্যের পাগলা গারদ এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। মানসিক রোগীদের থাকার জন্য ২০ টি কক্ষ থাকলেও বর্তমানে ৭ জন মানসিক রোগী রয়েছে। তাদের চিকিৎসা সেবা চলছে এখানে।
তারা হলেন, রাঙ্গুনিয়ার অশোক দাশ (৬০), আনোয়ারার প্রদীপ মল্লিক (৬৫), মধ্যম কুমিরর জয়া দেবী (৩৫), দোহাজারীর ঝুম্পা দে (৩০), নোয়াপাড়া। রাউজানের নুর নাহার বেগম (৩২), মিরসরাইয়ের রহিমা বেগম (৩৫) ও আনোয়ারার রচনা দাশ (৪০)। কবিরাজ চিত্ত রঞ্জন দাশের ছেলে সুভির সেন দৈনিক জনকন্ঠকে জানান, প্রতিটা মানসিক রোগীদের জন্য প্রতিমাসে ৬-৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়। তাদের কে দুই বেলা ভাত আর তিন বেলা চা-নাস্তা দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, এসব মানসিক রোগীদের পরিবার থেকেও কিছু টাকা প্রতি মাসে পাঠানো হলেও তা দিয়ে তাদের ভরন পোষণ চলে না। তাদের থাকার ঘর গুলো এখন বসবাসের অনুপযোগী। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। দামোদর ঔষধালয় ও কমলা ঔষধালয় এর বিষয়ে তিনি জানান, কমলা ঔষধালয় প্রায় ১৫০ বছর আগের। এটি অনেক আগে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে দামোদর ঔষধালয়টি কোনো রকম চালু রয়েছে, তাছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রোগীরা আসেন বিভিন্ন রোগের ঔষধ নেওয়ার জন্য।
বর্তমানে মানসিক রোগীদের ঔষধ ও মহিলাদের বাত ব্যথা, বেদনাদায়ক ঔষধ দেওয়া হয়। চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা: রশ্মি চাকমা বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে। আর এখানে যে পাগলা গারদ আছে তা জানতাম না? তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। তারা কি কি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তারা যদি মানসিক রোগী হয়, তাহলে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে মানসিক চিকিৎসা নিতে পারবে। চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব হোসেন জানান, এখানে যে পাগলা গারদ রয়েছে তা জানি না। প্রাচীনতম এই পাগলা গারদটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে তারপর জানানো হবে।
প্যানেল হু