ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

কোলেস্টেরল কমাতে প্রতিদিনের খাবারে রাখুন এই ১২টি খাবার

প্রকাশিত: ২১:১৪, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:১৬, ২৯ জুলাই ২০২৫

কোলেস্টেরল কমাতে প্রতিদিনের খাবারে রাখুন এই ১২টি খাবার

ছবি:সংগৃহীত

আমরা অনেকেই “কোলেস্টেরল” শব্দটা শুনলেই ভয় পেয়ে যাই। চিকিৎসকরা বলেন, বেশি কোলেস্টেরল মানেই হৃদরোগ, স্ট্রোক বা রক্তজমাটের ঝুঁকি। তবে সুসংবাদ হলো—সব সময় ওষুধের দিকেই ছুটতে হবে না। সঠিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবেই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

এ বিষয়ে কথা বলেছেন:
মার্থা থেরান, পুষ্টিবিদ, প্রিটিকিন লংজিভিটি সেন্টার
ডা. দীপক তালরেজা, সেন্টারা হেলথ-এর কার্ডিওলজির প্রধান

প্রথমে জেনে নিই—কেন কোলেস্টেরল এমন ভয়ংকর?
রক্তে দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকে—LDL (যাকে বলা হয় ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল) এবং HDL (‘ভাল’ কোলেস্টেরল)।
LDL যদি বেশি হয়, তা ধমনীতে চর্বি জমিয়ে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। আর তার ফলেই বাড়ে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি।
ভাগ্য ভালো, কিছু সহজ খাবারেই এই সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

যেসব খাবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে:
১. ওটস আর বার্লি (জব)
এই দানাদার শস্যে থাকে ‘বেটা-গ্লুকান’ নামের এক ধরনের ফাইবার, যা শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বেঁধে পায়খানার মাধ্যমে বের করে দেয়। সকালে ওটস, রাতে বার্লি স্যুপ—দুপুরে বেঁচে যান কোলেস্টেরল!

২. ডাল ও শিম
এই খাবারগুলো শুধু পেট ভরায় না, রক্তে কোলেস্টেরল শোষণও কমায়। সালাদ, স্যুপ বা রুটির সঙ্গে ভেজে খেলেও দারুণ!

৩. চর্বিযুক্ত মাছ
স্যালমন, সার্ডিন, ম্যাকেরেল—এই মাছগুলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর, যা হার্টের জন্য খুব ভালো। সপ্তাহে অন্তত ২ বার এই মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

৪. বাদাম
প্রতিদিন এক মুঠো (প্রায় ৩০ গ্রাম) আমন্ড বা ওয়ালনাট খেলে খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়। বাদাম খেতে খেতে হৃদয়ও হালকা হয়ে যায়!

৫. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডোতে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আর ফাইবার, যা LDL কমায় কিন্তু HDL ঠিক রেখে দেয়। মাখনের বদলে টোস্টে অ্যাভোকাডো দিলে স্বাস্থ্যও ঠিক থাকবে, স্বাদও।

৬. অলিভ অয়েল
এই তেল শুধু রান্নায় স্বাদই বাড়ায় না, হৃদ্‌যন্ত্রও সুরক্ষায় রাখে। অলিভ অয়েলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ কমিয়ে দেয়।

৭. আপেল, বেরি, সাইট্রাস ফল
এই ফলগুলোতে থাকা পেকটিন ফাইবার কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলের খোসা না ফেলে খাওয়ার চেষ্টা করুন—সেইখানেই ফাইবার বেশি থাকে!

৮. শাকসবজি ও ওকরা
ডার্ক গ্রিন শাক যেমন পালং, কেল, বা ওকরা ক্যালোরি কম, ফাইবার বেশি। এগুলো কোলেস্টেরল শরীরে শোষণ হতে বাধা দেয়।

৯. সয় প্রোটিন (টোফু, সোয়া দুধ, এডামামে)
গরু বা মুরগির মাংসের বদলে টোফু বা টেম্পে ব্যবহার করুন। এতে কোলেস্টেরল বাড়ে না, বরং হৃদ্‌যন্ত্র সুস্থ থাকে।

১০. গ্রিন টি
প্রতিদিন ১–২ কাপ গ্রিন টি পান করুন (চিনি ছাড়া)। এতে থাকা ক্যাটেচিন কোলেস্টেরল শোষণ কমাতে সাহায্য করে।

১১. টমেটো
টমেটোতে আছে ‘লাইকোপিন’—একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ধমনীতে প্লাক জমা আটকায়। রান্না করা টমেটোও ভালো কাজ করে।

১২. চিয়া বীজ
এই ক্ষুদে বীজে আছে ফাইবার, যা কোলেস্টেরল আটকে শরীর থেকে বের করে দেয়। দই, ওটস বা স্মুদি-তে যোগ করে খেতে পারেন।


একটি ভাল খাদ্যাভ্যাসই হতে পারে ওষুধের চেয়েও শক্তিশালী।
ডা. তালরেজা বলেন,

“ফাইবার, উদ্ভিজ্জ খাবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে ভরপুর খাবার—বিশেষ করে মেডিটারেনিয়ান বা প্ল্যান্ট-বেইজড ডায়েট—রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই কার্যকর। আর এর সঙ্গে যদি নিয়মিত হালকা ব্যায়াম যোগ করেন, তাহলে হার্ট থাকবে সুস্থ, জীবন চলবে দীর্ঘ।”
 

 
 

মারিয়া

×