
ছবি: প্রতীকী
ব্যায়াম করার পর আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পেশিতে টান পড়ে, ঘাম ঝরে, শক্তি কমে যায়। এই সময় শরীর দ্রুত শক্তি ফেরত চায়। অনেকেই ব্যায়ামের পর কিছু না খেয়ে বসে থাকেন বা ভুল খাবার খেয়ে শরীরকে আরও দুর্বল করে ফেলেন। অথচ ব্যায়ামের পর কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেলে শরীর দ্রুত চাঙ্গা হয়ে ওঠে, ক্লান্তি কমে যায় এবং শরীর গঠনের প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হয়।
প্রথমেই বলা যায়, পানি বা শরবত খাওয়া খুবই জরুরি। ব্যায়ামে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে যায়। তাই প্রথমে বিশুদ্ধ পানি বা লবণ-চিনি মেশানো লেবুর শরবত খেলে শরীরের পানির ঘাটতি দূর হয়। অনেকে নারকেল পানি খেতে পারেন, কারণ এতে প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট থাকে, যা শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট করে এবং ক্লান্তি কমায়।
প্রোটিন হলো ব্যায়ামের পর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান। কারণ ব্যায়ামে পেশির কিছুটা ক্ষয় হয় এবং সেই ক্ষয়補 করতে প্রোটিন দরকার হয়। ডিম একটি আদর্শ প্রোটিনের উৎস। ব্যায়ামের পর একটি সিদ্ধ ডিম বা অমলেট খাওয়া যেতে পারে। ডিমে আছে উচ্চ মানের প্রোটিন ও প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড, যা পেশিকে মেরামত করে এবং ক্লান্তি কমায়।
যারা নিরামিষভোজী, তারা চানা, ডাল বা সয়া খেতে পারেন। বিশেষ করে ভেজানো ছোলা বা হালকা সেদ্ধ ডাল খেলে শরীর প্রয়োজনীয় প্রোটিন পায়। সঙ্গে যদি কিছু ভাত বা রুটি খাওয়া হয়, তাহলে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট দুই-ই শরীরে মিলে যায়। কার্বোহাইড্রেট ব্যায়ামে ক্ষয় হওয়া গ্লাইকোজেন পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে, ফলে ক্লান্তি দূর হয়।
ফল খাওয়াও অত্যন্ত উপকারী। কলা, আপেল, কমলা, পেঁপে বা খেজুর — এসব ফলে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যা শরীরকে তৎক্ষণাত শক্তি দেয়। বিশেষ করে কলায় আছে পটাশিয়াম, যা পেশির খিঁচুনি কমায় এবং দ্রুত চাঙ্গা করে তোলে। খেজুরে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য চিনি ও আয়রন, যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে এবং শক্তি বাড়ায়।
দুধও একটি আদর্শ খাবার। ব্যায়ামের পর এক গ্লাস গরম দুধ বা দুধ দিয়ে তৈরি স্মুদি খেলে শরীরে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সরবরাহ হয়। যারা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট, তারা সয়া দুধ বা বাদামের দুধ খেতে পারেন। দুধের সঙ্গে যদি কলা বা ওটস মেশানো যায়, তাহলে এটি একটি পরিপূর্ণ রিকভারি মিল হয়ে দাঁড়ায়।
বাদাম ও বীজও উপকারী। যেমন কাঠবাদাম, কাজু, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি। এগুলোতে স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন ও ভিটামিন ই থাকে। তবে অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো, কারণ এগুলো অনেকটা ক্যালোরি যুক্ত। একমুঠো বাদাম ব্যায়ামের পর খেলে পেশি শক্তিশালী হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনরুদ্ধার পায়।
অনেকে প্রোটিন শেক পান করে থাকেন। এটি যদি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি হয় যেমন দুধ, কলা, মধু, ওটস বা পিনাট বাটার দিয়ে, তাহলে এটি খুবই কার্যকর। কিন্তু বাজারের রাসায়নিক প্রোটিন পাউডার না খাওয়াই ভালো, বিশেষ করে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া।
সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপ বা স্টু খেতেও পারেন। এতে হালকা প্রোটিন, মিনারেল ও পানি থাকে যা শরীরকে হাইড্রেট করে এবং ক্লান্তি কমায়। হালকা রান্না করা মুরগির স্যুপ বা ডাল-সবজির ঝোলও খেতে পারেন।
ব্যায়ামের পর খাবার খাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ব্যায়ামের ফলাফলও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তাই শরীরের প্রয়োজন বুঝে হালকা কিন্তু পুষ্টিকর খাবার বেছে নেওয়া উচিত, যাতে ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। নিয়মিত এই অভ্যাস গড়ে তুললে ব্যায়াম করার পর আর অতিরিক্ত ক্লান্ত অনুভব করবেন না, বরং আপনি নিজেই শরীরে এক ধরনের সতেজতা অনুভব করবেন।
এম.কে.