ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

হার্ট অ্যাটাক আর মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়, বলছেন চিকিৎসক! কিন্তু এক নিঃশব্দ বিপদ বেড়ে চলেছে

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ৩০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৯, ৩০ জুলাই ২০২৫

হার্ট অ্যাটাক আর মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়, বলছেন চিকিৎসক! কিন্তু এক নিঃশব্দ বিপদ বেড়ে চলেছে

ছবি:সংগৃহীত

আমেরিকায় হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যুর হার অনেকটা কমেছে। এটি নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বড় সাফল্য। কিন্তু হৃদরোগ একেবারে হারিয়ে যায়নি—বরং তার রূপ বদলেছে। এখন এক নিঃশব্দ, ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা বিপদ সামনে আসছে, যেটা অনেকের চোখেই পড়ে না।

এই মর্মে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আমেরিকান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. দিমিত্রি ইয়ারানভ। তাঁর মতে, “আমরা হার্ট অ্যাটাককে রুখতে পেরেছি, কিন্তু হৃদরোগকে নয়। এখন এটি ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে এবং অনেক সময় রোগী বুঝতেই পারেন না।”

হার্ট অ্যাটাক কমেছে, কিন্তু বাড়ছে দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগ
গত কয়েক দশকে হার্ট অ্যাটাকজনিত মৃত্যুর হার প্রায় ৯০ শতাংশ কমেছে। এর পেছনে রয়েছে চিকিৎসা, সচেতনতা ও প্রযুক্তির অগ্রগতি। তবে এখন বিপদ হচ্ছে, হৃদযন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগ (যেমন হার্ট ফেইলিওর, কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা অ্যারিদমিয়া) ধীরে ধীরে মানুষের শরীরের উপর প্রভাব ফেলছে।

এই রোগগুলো তেমন তীব্র নয় বলে প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় না। কিন্তু একবার শুরু হলে রোগীকে দীর্ঘ সময় ধরে কষ্ট দিতে পারে—কমিয়ে দেয় জীবনের গুণমান।

কী লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?
ড. ইয়ারানভ কিছু সাবটল বা কম চোখে পড়া উপসর্গের কথা বলেছেন, যেগুলোকে আমরা সাধারণ ক্লান্তি বা অন্য রোগ বলে ভুল করি। কিন্তু এগুলো আসলে হৃদরোগের প্রাথমিক সংকেত হতে পারে:

  • চোয়ালে বা মুখে ব্যথা
  • দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা অবসাদ
  • সাধারণ হাঁটাচলা বা কাজেও শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
  • পা বা গোড়ালি ফোলা
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন অক্ষমতা (ইরেকটাইল ডিসফাংশন)

তিনি পরামর্শ দেন, এসব উপসর্গ থাকলে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ভারতের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ এই বার্তা?
এই পরিস্থিতি শুধু আমেরিকার নয়। ভারতেও হৃদরোগের চেহারা পাল্টেছে। হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা ও মানসিক চাপ-এর কারণে বাড়ছে দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগের প্রকোপ—বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।

সেইসঙ্গে, দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

সমাধান কী?

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন (বিশেষত ৩০ বছর পার হওয়ার পর)
  • প্রতিদিন কিছুটা হলেও হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন
  • ভাজাভুজি ও বেশি লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
  • স্ট্রেস কমান এবং পর্যাপ্ত ঘুমান
  • উপসর্গ দেখলে দেরি না করে ডাক্তার দেখান

হৃদরোগের রূপ পাল্টেছে, আমরাও সচেতন হই
আজকের দিনে হৃদরোগ মানেই আর হঠাৎ একটা হার্ট অ্যাটাক নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি, ধীরে ধীরে শরীরকে দুর্বল করে দেওয়া অসুখ।
তাই জীবন বাঁচাতে হলে শুধু ওষুধ নয়, সচেতনতা, সময়মতো পরীক্ষা ও জীবনধারার পরিবর্তনই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

"এখন প্রশ্ন কেবল বাঁচার নয়—ভালোভাবে বাঁচার।" —ড. দিমিত্রি ইয়ারানভ

 
 
 

মারিয়া

×