
ছবিঃ সংগৃহীত
৩১ বছরের তেজস্বিনী হিরে, যিনি তখন যমজ সন্তানের আট মাসের গর্ভবতী ছিলেন, হঠাৎ করে তীব্র বুকের ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেন। তাঁকে দ্রুত কেম (KEM) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তার হৃদয়ের প্রধান রক্তনালীতে (অর্টা) একটি বিপজ্জনক ছিঁড়ে যাওয়া (aortic dissection) শনাক্ত করেন।
তবে প্রাথমিক চিকিৎসা ও নির্ভরযোগ্য পরামর্শে দেরি হওয়ায় একদিনের মতো সময় নষ্ট হয়। পরিবারের আশঙ্কা ছিল, দেরি করলে মা ও অনাগত দুই শিশুর কেউই বাঁচবেন না। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা তাঁকে জসলোক হাসপাতালে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন।
জসলোকে পৌঁছনোর পর অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে। হৃদযন্ত্রের ছিঁড়ে যাওয়া অংশটি তেজস্বিনীর করোনারি আর্টারি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল, এবং তাঁর হার্টের ভালভ মারাত্মকভাবে লিক করছিল। ফুসফুসে জল জমে যাওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। এই অবস্থাতেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কার্ডিয়াথোরাসিক সার্জন ডা. হেমন্ত পাঠারে বলেন, “এই রোগীর মারফান সিনড্রোম ছিল—একটি জিনগত রোগ যা হৃদযন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়। এই জটিল অবস্থাতেও আমরা ১৮ ঘণ্টা ধরে ওপেন-হার্ট সার্জারি করি।”
জসলোকে পৌঁছানোর সময় এক সন্তানের হার্টবিট আর ধরা যাচ্ছিল না, তাই জরুরি ভিত্তিতে সিজারিয়ান ডেলিভারি করে যমজ দুই কন্যাসন্তানকে জন্ম দেওয়া হয়। এরপর মা ও দুই নবজাতককে এক মাস হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
চিকিৎসার খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। তেজস্বিনীর স্বামী নিশান্ত হিরে বলেন, “কেম হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল হয়তো চার লাখের মধ্যে সব মিটে যাবে, কিন্তু অবস্থা এমন ছিল যে আমরা আর ভরসা রাখতে পারিনি। পরিবারের সকল সঞ্চয় শেষ করে, আত্মীয়-বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে শেষ পর্যন্ত তিনজনকেই বাঁচাতে পেরেছি।”
তেজস্বিনী এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি, তবে ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন। দুই শিশুই এখন দুই মাস বয়সী এবং সুস্থ। তাঁকে সারাজীবন রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খেতে হবে।
গাইনাকোলজিস্ট ডা. ড্যানি লালিওয়ালা বলেন, “গর্ভাবস্থায় মারফান সিনড্রোম থাকলে তা খুবই বিপজ্জনক। হৃদরোগ যে কোনো মুহূর্তে দেখা দিতে পারে—প্রথম দিন থেকেই প্রসব-পরবর্তী সময় পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে যায়।”
ডা. পাঠারের মতে, “এটি সম্ভবত বিশ্বে প্রথম সফল ঘটনা, যেখানে মারাত্মক হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভোগা একজন গর্ভবতী মা ও তার যমজ সন্তানরা তিনজনেই বেঁচে গেলেন। এমন ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর হার ৫০% এর বেশি, আর শিশু মৃত্যুর হার আরও বেশি হয়ে থাকে।”
মারিয়া