
ছবি: জনকণ্ঠ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভোলাব ও পূর্বাঞ্চলে চাহিদার বেশি সবজি উৎপাদন হয়। উৎপাদিত এসব সবজি হাটবাজার থেকে ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ করেন। এসব এলাকায় ভালো সবজির ফলন হওয়ায় চাষিদের কাছে সবজি অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে। তবে উৎপাদিত সবজির ২৫ শতাংশই নষ্ট হচ্ছে সংরক্ষণের অভাবে। এতে অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ‘চলতি অর্থবছরে রূপগঞ্জে দুই হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। আর সবজি উৎপাদিত হয়েছে ৪৬ হাজার ৪৫২ মেট্রিক টন। চলতি বছরে এক হাজার ৮৮৯ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন হতে পারে।’
কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার ২ টি পৌরসভা ও ৭ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সবজির মধ্যে বেগুন, মুলা, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, ঢেঁড়স, শিম, মিষ্টিকুমড়া, বাংলা লাউ, কাঁচা মরিচ, আলু, করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, পেঁপে ও ধনেপাতা অন্যতম। ভোলাবো এলাকার কৃষক বাবুল মিয়া ভাগ জানান, এখন সবজি চাষে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। সবজিক্ষেতে নিয়মিত পোকা দমন, ওষুধ ও সার প্রয়োগ করা না হলে আশানুরূপ ফলন আসে না। তাই লাখ লাখ টাকা খরচ করে সবজি উৎপাদন করতে হয়। আর মৌসুমের শুরুতে অল্প কয়েক দিন ভালো দামে সবজি বিক্রি করতে পারলেও মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসে সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কমে যায় সবজির দাম। তখন কম দামে বিক্রি করতে হয় সবজি।
দাউদপুর এলাকার সবজি চাষি আবুল মিয়া জানান, তারা প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদন করলেও সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নেই। হিমাগার না থাকায় সবজি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কম দামে বিক্রি করে দিতে হয় । এ কারণে তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। অথচ অনেক সময় সরবরাহ কম হলে বাইরে থেকে আনতে হয় সবজি। ফলে পণ্যের দাম ও পরিবহন খরচ মিলে বেড়ে যায় সবজির দাম। এতে করে ক্রেতাকে বেশি টাকায় সবজি কিনতে হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই এ অঞ্চলের কৃষকরা সরকারি অথবা বেসরকারি উদ্যোগে একটি সবজি হিমাগার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছেন।
সবজি চাষী মারফত আলী জানান, রূপগঞ্জকে বলা হয়ে থাকে সোনাফলা রূপগঞ্জ। মৌসুমে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সবজি শুধু এই উপজেলার পূর্বাচলেই উৎপাদিত হয়। আর গোটা উপজেলায় প্রায় অধকোটি টাকার সবজি চাষ হয়। কিন্তু হিমাগারের অভাবে সবজি নষ্টও হয় প্রচুর। তাই উপজেলায় যেন অন্তত একটি সবজি হিমাগারের ব্যবস্থা করা হয়।
কালনী এলাকার কৃষক সবুজ আলী বলেন, প্রথমে সব সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। পরে দাম কমে যায়। যেমন ঢেঁড়স, শুরুতে অন্য সবজির মতো ভালো দাম থাকে। মাঝে কমে যায় দাম। কিন্তু ঢেঁড়সের শেষ পর্যায়ে ভালো দাম পাওয়া যায়। তবে সেই সময় কারও কাছে এই সবজি থাকে না। কিন্তু সবজি সংরক্ষণের হিমাগার থাকলে সেখানে রেখে সুবিধামতো সময়ে বেশি দামে বিক্রি করা যেত। এতে করে কৃষকরা অর্থিকভাবে লাভবান হতেন।
খৈসাইর এলাকার কৃষক তৌহিদ মিয়া জানান, তাদের উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণ করতে পারলেই কেবল লোকসানের বদলে লাভের মুখ দেখবেন তারা। অন্যথায় বছরের পর বছর ধরে এভাবে লোকসানই গুনতে হবে তাদের। সবজি সংরক্ষণ করার সুযোগ পেলে এখানকার চাষিরা চাষাবাদে আরো আগ্রহী হবেন বলেও মনে করেন তিনি।
ডাঙ্গা এলাকার হোসেন আলী বলেন, ‘চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছি। এগুলো সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় ৮-১০ টাকা পাইকারি দামে জমিতেই বিক্রি করতে হয়েছে।’
পুটিনাএলাকার টমেটো চাষি রহম আলী জানান, টমেটোর গাছে গাছে ফুল আর কলি এসেছে। কিছুদিন পর জমি থেকে টমেটো তুলতে শুরু করবেন চাষিরা। এরপর হাটবাজারে বিক্রি শুরু হবে। প্রথম দিকে টমেটোর ভালো দাম পাওয়া যায়। তবে শেষের দিকে কেউ নিতে চায় না। সেই সময় টমেটো সংরক্ষণ করা গেলে অফ সিজনে ভালো দামে বিক্রি করা যাবে। এতে করে চাষিরা আরও লাভবান হবেন।
সবজি ব্যবসায়ী হাবিব আলী জানান, শীতকালে সবজির ভরা মৌসুম। এ সময় সব সবজির দাম কম হয়। কিছুদিন গেলে আবার সবজির দাম বেড়ে যাবে। এখন সবজি সংরক্ষণ করা গেলে পরবর্তী সময়েও ভালো দামে বিক্রি করা যেত।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, ‘এখানে সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি সবজি চাষ করা হয়। হিমাগারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদন করা এই সবজি কম দামে বিক্রি করে দিতে হয়। মৌসুমে শুধু সংরক্ষণের অভাবে প্রায় চার কোটি টাকার সবজি পচে নষ্ট হয়। একটি হিমাগার স্থাপন করা হলে এই উপজেলার কৃষকরা উপকৃত হবেন।
শিহাব