
ছবি: প্রতীকী (সংগৃহীত)
জাপানের ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে দাবি করেছেন দেশটির একদল গবেষক। ‘জাপান ইনস্টিটিউট ফর হেলথ সিকিউরিটি’-এর গবেষণা বলছে, যেসব মানুষের খাবারের তালিকায় ঘনঘন থাকে সাদা ভাত, মিসো স্যুপ, সয়াবিনজাত খাবার, রান্না করা শাকসবজি, সামুদ্রিক শৈবাল, মাছ ও গ্রিন টি—তাদের মধ্যে হতাশার লক্ষণ দেখা যাওয়ার হার তুলনামূলকভাবে কম।
২০১৮ থেকে ২০২০ অর্থবছরের মধ্যে জাপানের কানতো ও টোকাই অঞ্চলের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১২ হাজার ৫০০ কর্মীর ওপর চালানো জরিপের ভিত্তিতে এই তথ্য উঠে আসে।
কোন নির্দিষ্ট খাবার নয়, গুরুত্ব পাচ্ছে খাবারের ধরন
গবেষকরা প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, মদ্যপান ও মানসিক অবস্থার ওপর একটি বিস্তৃত প্রশ্নমালা তৈরি করেন। এর ভিত্তিতে তারা তৈরি করেন ‘ট্র্যাডিশনাল জাপানিজ ফুড স্কোর’। যাদের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত ছিল সাদা ভাত, মিসো স্যুপ, সয়াবিনজাত খাবার, রান্না করা সবজি, মাশরুম, সামুদ্রিক শৈবাল, মাছ এবং গ্রিন টি, তারা পেয়েছেন বেশি স্কোর।
এই গবেষণার বিশেষত্ব হলো, এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবারের গুণাগুণ বিশ্লেষণের বদলে পুরো খাদ্যধারাকেই প্রাধান্য দিয়েছে। আগে যেমন 'নাট্টো (গাঁজন করা সয়াবিন)' এককভাবে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন গবেষকরা মনে করছেন, একাধিক উপাদানে গঠিত একটি পূর্ণাঙ্গ খাবারই মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলে।
হতাশার লক্ষণ কম যাদের স্কোর বেশি
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বিগত এক সপ্তাহের মানসিক অবস্থা যাচাই করতে তাদের কাছে ১১টি মানসিক অনুভূতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, যেমন—‘মন খারাপ লাগা’, ‘ঘুমের সমস্যা’ ইত্যাদি। যাদের স্কোর ৯ বা তার বেশি ছিল, তাদের ‘হতাশাগ্রস্ত’ শ্রেণিতে ফেলা হয়।
এরপর অংশগ্রহণকারীদের চারটি ভাগে ভাগ করে দেখা হয়, কারা কত বেশি ঐতিহ্যবাহী জাপানি খাবার খান এবং তাদের মানসিক অবস্থার মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি না। দেখা যায়, যাদের ফুড স্কোর সবচেয়ে কম, তাদের মধ্যে ৩৫.৮ শতাংশ ছিলেন হতাশাগ্রস্ত। বিপরীতে, সর্বোচ্চ স্কোর পাওয়া গ্রুপে হতাশার হার ছিল মাত্র ২৫.৩ শতাংশ।
বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অতিরিক্ত কাজ, মদ্যপান ও ঘুমের সময়কাল—এসব ভিন্নতা পরিসংখ্যানগতভাবে সামঞ্জস্য করার পর গবেষকরা দেখতে পান, সর্বোচ্চ স্কোর পাওয়া গ্রুপে হতাশার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম, যা তুলনামূলকভাবে ১৭ শতাংশ কম।
পুষ্টি উপাদানের ভূমিকা
গবেষকরা বলছেন, এই প্রভাবের পেছনে ভূমিকা রাখছে ফোলেট বা ভিটামিন বি-৯, যা শৈবাল, সয়াবিন ও কিছু সবজিতে পাওয়া যায়। এটি মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে সহায়ক, যা মনোভাব, রক্তচাপসহ নানা কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাশাপাশি মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও এই কাজে সহায়তা করে।
পরিবর্তিত ‘জাপানি ডায়েট’-এর প্রস্তাব
তবে গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, ঐতিহ্যবাহী জাপানি খাবার নিখুঁত নয়। সাদা ভাতে ফাইবার কম, দুধ বা কাঁচা শাকসবজি ও ফলমূলও কম থাকে এই খাদ্যধারায়। আবার আচারজাত খাবার ও শুকনা মাছে সোডিয়াম থাকে অনেক বেশি।
তাই গবেষকরা একটি ‘পরিমার্জিত জাপানি ফুড স্কোর’ তৈরি করেন, যেখানে বেশি স্কোর পাওয়া যায় বাদামি ভাত, দুধজাত পণ্য, কাঁচা শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেলে। অপরদিকে লবণাক্ত খাবার বেশি খেলে স্কোর কমে।
এই পরিবর্তিত স্কোরেও একই ধরণের ফলাফল পাওয়া গেছে—উচ্চ স্কোর মানে হতাশার লক্ষণ কম। তবে গবেষকরা বলছেন, যেহেতু একই সময়ে খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তাই এটি একটি সরাসরি কারণ-ফলাফল সম্পর্ক প্রমাণ করে না।
গবেষণা দলের সদস্য ও জাপান ইনস্টিটিউট ফর হেলথ সিকিউরিটি-র জ্যেষ্ঠ গবেষক হারুকা মিয়াকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘমেয়াদি তথ্যভিত্তিক গবেষণা চালিয়ে জানতে চাই, খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে প্রকৃত সম্পর্ক কতটা গভীর।’
রাকিব