ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

সকাল শুরু করুন সুস্থভাবে: ৮টি প্রাকৃতিক পানীয় যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:৫৫, ২৯ জুলাই ২০২৫

সকাল শুরু করুন সুস্থভাবে: ৮টি প্রাকৃতিক পানীয় যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

ছবি:সংগৃহীত

আজকের দিনে ডায়াবেটিস বা রক্তে অতিরিক্ত শর্করার সমস্যা খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে। এর প্রধান কারণ আমাদের ব্যস্ত জীবনধারা, মানসিক চাপ এবং অনিয়মিত খাবার। তবে, প্রতিদিন সকালে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

এখানে ৮টি সহজ ঘরোয়া পানীয়ের কথা বলা হলো, যেগুলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিটির উপকারিতা ও প্রস্তুত প্রণালী নিচে দেওয়া হলো।

১. মেথি জল (ফেনুগ্রিক ওয়াটার)
কেন উপকারী:
মেথি বীজে আছে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় আঁশ, যা ইনসুলিনের কাজ আরও কার্যকর করে। এটি রক্তে শর্করা এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে।

কীভাবে তৈরি করবেন:
১ চা চামচ মেথি বীজ এক কাপ পানিতে রাতভর ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে সেই জল পান করুন। ইচ্ছা করলে বীজগুলো চিবিয়ে খেতে পারেন।

২. দারচিনি জল
কেন উপকারী:
দারচিনি রক্তে শর্করার শোষণ কমায় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়। এটি উপবাস অবস্থার ও খাবারের পর রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে।

কীভাবে তৈরি করবেন:
১.৫ কাপ জল ফুটিয়ে তাতে ১টি দারচিনির কাঠি বা ১ চা চামচ গুঁড়ো দারচিনি দিন। ৫–৭ মিনিট সেদ্ধ করুন। হালকা গরম অবস্থায় পান করুন।

৩. আমলকি রস
কেন উপকারী:
আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

কীভাবে তৈরি করবেন:
২ টেবিল চামচ টাটকা আমলকি রস আধা কাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন। চাইলে এক চিমটে হলুদ বা বিট লবণ মেশাতে পারেন।

৪. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ড্রিংক
কেন উপকারী:
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে খাবারের পর রক্তে শর্করার হঠাৎ বাড়া রোধ করতে পারে। এটি HbA1c ও খারাপ কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে।

কীভাবে তৈরি করবেন:
১ কাপ কুসুম গরম জলে ১ টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। ইচ্ছা করলে এক চিমটে দারচিনি বা কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিতে পারেন।

৫. জাম বীজের গুঁড়োর জল
কেন উপকারী:
জাম বীজ রক্তে শর্করার বিপাক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং বহু প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদে এটি ডায়াবেটিসের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

কীভাবে তৈরি করবেন:
১ কাপ গরম জলে ১/২ চা চামচ জাম বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন।

৬. অ্যালোভেরা রস
কেন উপকারী:
অ্যালোভেরা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়ক। এটি হজম শক্তি বাড়ায় ও প্রদাহ কমায়।

কীভাবে তৈরি করবেন:
১ কাপ জলে ২ টেবিল চামচ টাটকা অ্যালোভেরা রস মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন।

৭. করলার রস
কেন উপকারী:
করলায় রয়েছে চারান্টিন ও পলিপেপ্টাইড-পি নামক দুটি উপাদান, যেগুলো ইনসুলিনের মতো কাজ করে এবং রক্তে শর্করা কমায়।

কীভাবে তৈরি করবেন:
অর্ধেক করলা টুকরো টুকরো করে আধা কাপ জলের সঙ্গে ব্লেন্ড করুন। ছেঁকে নিয়ে ধীরে ধীরে খালি পেটে পান করুন।

৮. তুলসী চা
কেন উপকারী:
তুলসী মানসিক চাপ কমিয়ে কর্টিসল হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে।

কীভাবে তৈরি করবেন:
এক কাপ জলে কয়েকটি টাটকা তুলসী পাতা দিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। ছেঁকে নিয়ে হালকা গরম অবস্থায় চায়ের মতো পান করুন।

একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা:
এই তথ্যগুলো শুধুমাত্র সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য। আপনি যদি ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন বা ওষুধ খান, তবে নতুন কিছু শুরু করার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সুস্থ শরীরের শুরু হোক এক কাপ স্বাস্থ্যকর পানীয় দিয়ে!
দিনের শুরুটা যদি সঠিক হয়, তাহলে শরীর ও মন—দুটোই থাকবে ফুরফুরে।

 
 

মারিয়া

×