
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমানোর প্রস্তাবে জেলাব্যাপী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন চলছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, বাগেরহাটে একটি আসন কমানোর প্রস্তাব এসেছে। এ প্রস্তাবের পরপরই বাগেরহাটের সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সচেতন নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
বুধবার রাত ১০টার দিকে ‘সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাগেরহাটে চারটি আসন থেকে একটি কমানো একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং মোংলা বন্দর যেখানে অবস্থিত, সেই এলাকাকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যেই এ ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা এটিকে অন্যায় মনে করি এবং এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকারকে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানাই। দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বক্তারা বলেন, ১৯৭০ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি আসন রয়েছে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সমন্বয়ক এম. এ. সালাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খাদেম নিয়ামুল নাছির আলাপ, বিএনপি নেতা শাহেদ আলী রবি, হাদিউজ্জামান হিরো, সৈয়দ নাসির আহম্মেদ মালেক, শ্রমিকদল নেতা সরদার লিয়াকত আলী প্রমুখ।
ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান, পারভেজ তরফদার ও শঙ্কর সেন বলেন, বাগেরহাট এমনিতেই অবহেলিত শহর। এরপর যদি একটি আসন কমে যায়, তাহলে আরও অবহেলিত হয়ে পড়বে। এতে উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটবে। এটি নির্বাচন কমিশনের ভুল সিদ্ধান্ত।
ডা. দিব্যাদীপ্তি দাস, পিসি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শামিম মুন্সী এবং ছাত্রনেতা শেখ আল মামুন বলেন, বাগেরহাটের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এখানে এখনও উল্লেখযোগ্য কোনো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। এরপর যদি একটি আসন কমে যায়, তাহলে অবস্থার আরও অবনতি হবে।
বাগেরহাট ডিস্ট্রিক্ট পলিসি ফোরামের সভাপতি এবং বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বাবুল সরদার বলেন, বাগেরহাটে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ রয়েছে। এখানে আসন কমানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আসন কমানো হলে উপকূলীয় এ জেলার উন্নয়ন ব্যাহত হবে। এ বিষয়ে দলমত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে নাগরিক সংলাপ ছাড়া উপর থেকে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, কিছু সময় আগে নির্বাচন কমিশন থেকে একটি খসড়া বিজ্ঞপ্তি আমরা দেখেছি। বাগেরহাট একটি বৃহৎ জেলা-নয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। সেখানে চারটি আসন দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। এখন তিনটি আসনের প্রস্তাব অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।
জেলা জামায়াত নেতা মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, বাগেরহাটে চারটি আসন থেকে একটি কমানোর প্রস্তাবকে আমরা ষড়যন্ত্র মনে করি। সুন্দরবন ও ষাট গম্বুজ মসজিদের মতো বিশ্ব ঐতিহ্য যেখানে রয়েছে, সেই এলাকাকে দুর্বল ও সংকুচিত করার উদ্দেশ্যে এটি করা হচ্ছে। আমরা এটিকে অন্যায় মনে করি এবং তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বাগেরহাটের আপামর জনগণ তা মেনে নেবে না।
মিরাজ খান