ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সংসদীয় আসন সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাবে উত্তাল জনমত

হীরা আহমেদ জাকির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ৩১ জুলাই ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সংসদীয় আসন সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাবে উত্তাল জনমত

ছবি: জনকণ্ঠ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন পুনঃসীমানা নির্ধারণের খসড়া তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন (বুধন্তি, চান্দুরা ও হরষপুর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবকে ঘিরে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া তালিকা প্রকাশ করার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ ও আপত্তি প্রকাশ করছেন।

স্থানীয় নাগরিক সমাজ, রাজনীতিক এবং তরুণদের মতে, এই তিনটি ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন হলে বিজয়নগরের প্রশাসনিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা বলছেন, "একটি উপজেলা যদি প্রশাসনিকভাবে এক থাকে কিন্তু সংসদীয়ভাবে বিভক্ত হয়, তাহলে জনসেবা, উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হবে।"

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের রাজনীতিতে সক্রিয়, বিএনপি থেকে এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) জাতীয় সংসদের ২৪৫নং আসন, যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিজয়নগর উপজেলা— ১০টি ইউনিয়নের এক ঐক্যবদ্ধ সামাজিক কাঠামো। প্রায় ১.৭ লক্ষ ভোটার নিয়ে এই অঞ্চল শুধু একটি প্রশাসনিক একক নয়, বরং একটি সুগঠিত মানবিক ও রাজনৈতিক সমাজব্যবস্থা। এই ঐক্য ও পরিচয় অটুট থাকুক। এখান থেকে কোনো ইউনিয়নের বিচ্যুতি আমরা মেনে নিতে পারি না।”

বিষয়টির প্রতিবাদে ঢাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকাস্থ বিজয়নগরবাসীরা। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুর ২টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে স্মারকলিপি প্রদান ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করবেন তারা। আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রকৌশলী আমিনুল হক চৌধুরী ও মোঃ আতাউল্লাহ।

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ও এনসিপি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের এমপি প্রার্থী মোঃ আতাউল্লাহ বলেন, “৬৫ হাজার ভোটারকে সরাইল-আশুগঞ্জে ঠেলে দিয়ে বিজয়নগরের নেতৃত্ব ও সম্ভাবনাকে দুর্বল করা হচ্ছে। পৌরসভা গঠন, সরকারি কলেজ স্থাপনসহ নানা দাবি দমিয়ে রাখতেই এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১০ আগস্ট ২০২৫ (২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ) পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকরা লিখিতভাবে আপত্তি, পরামর্শ ও সুপারিশ জমা দিতে পারবেন। পরে তা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সীমানা পুনর্নির্ধারণে জনগণের মতামত ও আপত্তি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করা হবে। প্রশাসনিক কার্যকারিতা, ভৌগোলিক যুক্তি ও জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখা আমাদের মূল লক্ষ্য।”

উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম ১০ ইউনিয়ন নিয়েই পরিচালিত হলেও, সংসদীয় নির্বাচনে বিভক্ত হলে তাতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অভিভাবকত্বের প্রশ্নে দ্বিধা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

একজন সাবেক স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা বলেন, “একটি উপজেলা যদি জাতীয় সংসদে একাধিক আসনে বিভক্ত হয়, তাহলে জনগণ বুঝতেই পারে না কে তাদের প্রকৃত এমপি। এতে দায়বদ্ধতার ঘাটতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।”

×