ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

আকাশে চোখ এখন সবখানে: ড্রোন বদলে দিচ্ছে বিশ্বকে

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ১ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১০:০১, ১ আগস্ট ২০২৫

আকাশে চোখ এখন সবখানে: ড্রোন বদলে দিচ্ছে বিশ্বকে

ছবিঃ সংগৃহীত

ড্রোন এখন আর কেবল পার্শ্বপ্রযুক্তি নয়। এগুলো হয়ে উঠেছে যুদ্ধ, মানবিক সহায়তা, নজরদারি এবং গণমাধ্যমের নতুন নিয়ম নির্ধারক। বিশ্বকে বাধ্য করছে আকাশ নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা পুনরায় নির্ধারণ করতে।

দ্রুততা, তথ্য ও নির্ভুলতা-নির্ভর এই আধুনিক যুগে ড্রোন, যা এক সময়ে খেলনা কিংবা যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন নাগরিক জীবনের বিভিন্ন খাতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বন্যাকবলিত গ্রাম, আফ্রিকার ক্লিনিক কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ার খামার—সব জায়গায় ড্রোন ব্যবহারের ব্যাপ্তি বাড়ছে।

যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোনের উত্থান

২০২৫ সালের জুনে, ইউক্রেন ১১৭টি FPV এবং লুইটারিং ড্রোন পাঠিয়ে রাশিয়ার পাঁচটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়। এই অভিযানের কোডনাম ছিল "অপারেশন স্পাইডার'স ওয়েব"। এতে ধ্বংস হয় ৪০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ছিল Tu-95 ও Tu-22 বোমারু বিমান।

এই ড্রোনগুলো ছিল মূলত স্থানীয়ভাবে তৈরি, কম খরচের এবং AI-নিয়ন্ত্রিত। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর মতে, জুন মাসেই ড্রোন দিয়ে ২০,০০০ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়, যার মধ্যে ৫,০০০ সামরিক সম্পদ ধ্বংস হয়।

রাশিয়া এখন এই “উড়ন্ত মশা” থেকে বাঁচতে ইস্পাতের ঘাঁটি নির্মাণ করছে এবং ছদ্মবিমান মোতায়েন করছে।

মহামারিকালীন ড্রোনের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ

কোভিড-১৯ মহামারির সময়, রুয়ান্ডায় Zipline ড্রোনের মাধ্যমে টিকা, রক্ত ও সুরক্ষাসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয় দূরবর্তী ক্লিনিকে। স্পেনে ড্রোন দিয়ে লাউডস্পিকারে লকডাউন নির্দেশনা প্রচার করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে রাস্তা জীবাণুমুক্ত করতে স্প্রে ড্রোন ব্যবহার করা হয়। ইতালিতে থার্মাল ড্রোন ব্যবহার করে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা নিরীক্ষণ করা হয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ড্রোন এখন প্রথম সাড়া প্রদানকারী

২০১৫ সালের নেপাল ভূমিকম্প, ২০১৭ সালের হার্ভিকেন হার্ভি এবং ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর বাংলাদেশে সুন্দরবনের বাঁধ পরিদর্শনে ড্রোন ব্যবহৃত হয়। ইউরোপের কিছু অঞ্চলে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া রোগীদের কাছে দ্রুত ডিফিব্রিলেটর পৌঁছে দিচ্ছে ড্রোন। মালাউইর দুর্গম গ্রামে HIV পরীক্ষার নমুনা ল্যাবে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ড্রোনের মাধ্যমে।

কৃষিতে ড্রোনের নীরব বিপ্লব

মাল্টিস্পেকট্রাল ড্রোন দিয়ে শস্যের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ, কীটনাশক প্রয়োগ, পানির চাহিদা বিশ্লেষণ এখন সহজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পশুপালকরা থার্মাল সেন্সর ও RFID প্রযুক্তিযুক্ত ড্রোন ব্যবহার করছেন গবাদিপশু নজরদারিতে। মাটির ৩ডি ম্যাপ তৈরি করতেও সাহায্য করছে ড্রোন।

চিত্রগ্রহণ থেকে সুরক্ষা পর্যন্ত

ড্রোন এখন চলচ্চিত্র নির্মাণ, লাইভ ইভেন্ট কভারেজ, অবকাঠামো পরিদর্শন, পরিবেশ পর্যবেক্ষণেও ব্যবহৃত হচ্ছে। কেনিয়ার হাতির পাল অনুসরণ থেকে শুরু করে চিলির খনিতে ৩ডি ম্যাপ তৈরির কাজেও ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ, ভিড় পর্যবেক্ষণ এবং সীমান্ত পাহারায় ড্রোন ব্যবহার করছে। বনের ধ্বংস ও চোরাশিকার নিয়ন্ত্রণেও ব্যবহার হচ্ছে এই প্রযুক্তি।

ড্রোন এখন সাংবাদিকতা, শিল্প, বিজ্ঞান এমনকি বিনোদনের অংশ। FPV ড্রোন রেসিং এবং এরিয়াল ভ্লগিং এখন বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি।

বৈশ্বিক বাজার ও নেতৃত্ব

বর্তমানে বৈশ্বিক ড্রোন বাজারের মূল্য ৪০-৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছাড়িয়ে যেতে পারে। বাণিজ্যিক ব্যবহারে চাহিদা সামরিক খাতকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

চীন বিশ্ববাজারে ড্রোন উৎপাদনে শীর্ষে, যেখানে DJI কোম্পানি সবচেয়ে বড় নাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত সামরিক ও স্বয়ংক্রিয় ড্রোনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইসরায়েল নজরদারি ড্রোনে এবং তুরস্ক কম দামে যুদ্ধ ড্রোনে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে। ভারত ও ফ্রান্স সরকারি সহায়তায় বাণিজ্যিক ও সামরিক উভয় খাতেই ড্রোন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে।

নোভা

×