
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজগতের সবচেয়ে রহস্যময় বস্তুগুলোর একটি হলো ব্ল্যাক হোল আর যখন এই ব্ল্যাক হোল ঘূর্ণায়মান হয়, তখন তার প্রভাব মহাবিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেছেন, ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাক হোল কীভাবে জেট তৈরি করে, স্পেসটাইম বা স্থান-সময়কে বাঁকিয়ে দেয় এবং গ্যালাক্সির গঠন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।
প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. ফিল প্লেইট তাঁর প্রতিবেদনে বলেন, বিশ্বজগতে প্রায় সবকিছুই ঘোরে পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য, এমনকি গ্যালাক্সিও। এই ঘূর্ণনশক্তিই মূলত ব্ল্যাক হোলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যেটা তাদের আচরণ ও শক্তির উৎসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যখন একটি বিশাল তারকা জ্বালানি ফুরিয়ে ফেলে, তখন এর কেন্দ্রীয় অংশ সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধসে পড়ে এবং একটি ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়ায় তারার ঘূর্ণন আরও তীব্র হয়ে ওঠে একটি কয়েক হাজার কিলোমিটার প্রশস্ত তারার কেন্দ্রীয় অঞ্চল মাত্র ১০ কিলোমিটার পরিসরে সংকুচিত হয়ে প্রতিনিয়ত শত শতবার ঘুরতে পারে।
বিজ্ঞান অনুযায়ী, একটি ব্ল্যাক হোলকে তিনটি বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত করা যায় ভর (mass), চার্জ (charge) এবং ঘূর্ণন (angular momentum)। এর মধ্যে, চার্জ সাধারণত শূন্যের কাছাকাছি থাকে, ফলে ব্ল্যাক হোলের ভর ও ঘূর্ণনই তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
ঘূর্ণন শুধু ধ্বংসাত্মক নয়—এটি আশেপাশের স্থান-সময় বা স্পেসটাইমকেও বিকৃত করে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব অনুসারে, ঘূর্ণনশীল ব্ল্যাক হোল স্পেসটাইমকে টেনে নিয়ে যায়, যাকে বলা হয় "ফ্রেম ড্র্যাগিং"। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যা ব্ল্যাক হোলের চারপাশের গ্যাস ও ধুলোকে ঘূর্ণায়মান করে তোলে এবং এ থেকেই উৎপন্ন হয় প্রবল জেট আলোক বেগের কাছাকাছি গতিতে বেরিয়ে যাওয়া পদার্থের ধারা। এই জেট আশেপাশের গ্যাস ও ধূলিকণাকে ছিটকে দেয়, এমনকি নতুন তারকার জন্মও থামিয়ে দেয়। এভাবেই ব্ল্যাক হোলের স্পিন একেবারে গ্যালাক্সির আকার ও গঠন নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না, সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল কীভাবে গঠিত হয়। তা কি একাধিক ছোট ব্ল্যাক হোল একত্রে মিলে তৈরি হয়, না কি ধীরে ধীরে গ্যাস ও ধূলিকণা শোষণ করে তারা বেড়ে ওঠে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোলের স্পিন বিশ্লেষণের চেষ্টা করছেন।
যেমন, কাছের গ্যালাক্সি NGC 1365-এর কেন্দ্রে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের স্পিন প্রায় আলোর গতির কাছাকাছি পরিমাপ করা হয়েছে। এই তথ্য ব্ল্যাক হোলের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে ভবিষ্যতের গবেষণার পথ দেখাতে পারে। ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাক হোল শুধু মহাবিশ্বের প্রান্তে নয়, আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। গ্যালাক্সির কেন্দ্রের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল হয়তো আমাদের সৌরজগত গঠনের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। তাই, এই রহস্যময় ঘূর্ণায়মান দানবগুলোকে বুঝতে পারা মানব সভ্যতার অন্যতম বৈজ্ঞানিক বিজয় হতে পারে।
আঁখি