ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

চ্যাটজিপিটি - তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপদ ব্যবহার

.

প্রকাশিত: ২১:০৩, ১ আগস্ট ২০২৫

চ্যাটজিপিটি - তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপদ ব্যবহার

.

চ্যাটজিপিটি- শব্দটির সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠছে কমবেশি সবারই। শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে মোটামুটি লেখাপড়া জানা সব পেশার মানুষের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই এআই প্রযুক্তি। সামগ্রিকভাবে প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কার জীবনকে অনেক সহজ করেছে। তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করে চ্যাটজিপিটির নিরাপদ ব্যবহার এবং আনুষঙ্গিক নানা বিষয় নিয়ে জানাচ্ছেন- আরিফুর রহমান
চ্যাটজিপিটি হয়ে উঠছে আমাদের জানাশোনার নিত্যসঙ্গী। বড় বড় বই ঘেটে উত্তর খোঁজার কিংবা দীর্ঘ সময় ব্যয় করে কোনো একটি বিষয়ে নিবন্ধ তৈরি করা, অথবা জটিল কোনো বিষয় সহজেই জানতে এই এআই প্রযুক্তির জুড়ি নেই। তবে এ প্রযুক্তি কতটা নিরাপদ বা কতটা সমৃদ্ধ হলো- সে প্রশ্ন এক পাশে রাখলেও এর গুরুত্ব যে দিনকে দিন বাড়ছেই, তা অস্বীকারের উপায় নেই। যে কোনো প্রশ্ন করলেই সহজে উত্তর দিয়ে দেয় সে। শুধু গুরুগম্ভীর আলোচনা নয়, সে লিখে দেয় কবিতাও! রেসিপি থেকে শুরু করে গণিত সমাধান, ভার্সিটির অ্যাসাইনমেন্ট, রিপোর্টের সব ধরনের কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। যখন যা কিছু মনে আসছে এআই চ্যাটবটের কাছে জানতে চাইছেন। কিংবা সময় বাঁচিয়ে তার কাছ থেকেই সমাধান নিচ্ছেন। কিন্তু খেয়াল করেছেন কি, এতে কিছু আপনার চিন্তা করার ক্ষমতা কমছে। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা সংস্থাই জানিয়েছে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চ্যাটজিপিটি আপনার জন্য ডিজিটাল জিনিস হলেও আসলে তা আপনাকে বোকার পরিণত করছে। এ কথা বলছে এমআইটি’র বিজ্ঞানী-গবেষকরা। তারা গবেষণায় খুঁজে পেয়েছেন, চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল ব্যবহার করায় মস্তিষ্কে ক্ষতি হচ্ছে, ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে স্মৃতি। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা। ‘দ্য কগনিটিভ কস্ট অব ইউজিং লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলস’ শীর্ষ স্টাডিতে বলা হয়েছে, চ্যাটজিপিটির মতো টুল মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা, শেখার ক্ষমতা, এমনকী মাথায় কোনো তথ্য রাখার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
এমআইটি-তে ৫৪ জন পড়ুয়ার উপরে ৪ মাস ধরে গবেষণা করা হয়েছে। তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়, এক দল চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে, একদল গুগল এবং আরেকটি দল কোনো কিছুরই সাহায্য না নিয়ে বিভিন্ন কাজ করে। ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফি (ইইজি) ডিভাইস দিয়ে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, এআই ব্যবহারকারী গ্রুপ প্রথমে দ্রুত রেজাল্ট দেখালেও, দীর্ঘ সময়ে মস্তিষ্ক ধীর-স্থির হয়ে গিয়েছে। পড়ুয়ারা যারা চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে, তাদের কোনো কিছু মনে রাখার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তাদের ব্রেইন কাজ করাও কমিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে, যারা কোনো কিছুর সাহায্য না নিয়ে কাজ করেছেন, প্রজেক্ট লিখেছেন, তাদের পরীক্ষার ফলাফল অনেক ভালো। ভাষাগত দক্ষতাও অনেক বেশি।
এদিকে যারা গুগল ব্যবহার করেছিল, সেই পড়ুয়াদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা মাঝারি ছিল। চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের তুলনায় তাদের চিন্তাশক্তি বেশি। তারা নিজস্ব আইডিয়া বা ভাবনা ভাবতে সক্ষম। এই সমীক্ষাতেই উঠে এসেছে যে যারা নিয়মিত চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে, তাদের শুধু কীভাবে ভাববে, তার উপরেই প্রভাব নয়, সামগ্রিক ভাবনাচিন্তার উপরেই প্রভাব পড়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপরে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তাদের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা কমিয়ে দিয়েছে। কোনো সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করা, লেখার ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে।

নিরাপদ ব্যবহার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ওপর মানুষের বাড়তে থাকা নির্ভরতার বিষয়ে সতর্ক করেছেন চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান। তাঁর মতে, চ্যাটজিপিটিকে অনেকেই মানসিক সহায়তার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলেও, এতে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার আইনগত কোনো নিশ্চয়তা নেই। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় পডকাস্ট ‘দিস পাস্ট উইকেন্ড’-এ এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
স্যাম অল্টম্যান বলেন, ‘চ্যাটজিপিটিতে মানুষ তাঁদের জীবনের অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। তরুণেরা চ্যাটজিপিটিকে থেরাপিস্ট, লাইফ কোচের মতো পরামর্শদাতা বা সম্পর্কের জটিলতা নিরসনের সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু বাস্তবে এই আলাপচারিতা কোনো আইনি গোপনীয়তার আওতায় পড়ে না। আপনি যদি কোনো চিকিৎসক, আইনজীবী বা থেরাপিস্টের সঙ্গে এসব বিষয় আলোচনা করেন, তাহলে তা আইনগতভাবে গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা থাকে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এমন আলাপের ক্ষেত্রে এখনো সে রকম কোনো কাঠামো তৈরি হয়নি। আমি মনে করি, এটি একটি গুরুতর সমস্যা। একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথোপকথনের মতোই এআইয়ের সঙ্গে আলাপের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অধিকার থাকা উচিত। এক বছর আগেও কেউ এসব নিয়ে ভাবেননি।’
চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের চ্যাট সংরক্ষণ ও তথ্য উন্মুক্ত করার বিষয়ে ইতিমধ্যে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ওপেনএআই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে চলমান এক মামলায় আদালত প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীদের চ্যাট সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই আদেশের আওতায় নেই ওপেনএআইয়ের এন্টারপ্রাইজ গ্রাহকেরা। প্রতিষ্ঠানটি এই আদেশকে ‘অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে আপিল করেছে। ওপেনএআই জানিয়েছে, আদালতের এই নির্দেশ কার্যকর হলে ভবিষ্যতে আরও ব্যাপকভাবে তথ্য উন্মুক্ত করার দাবি উঠতে পারে, যা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
সাক্ষাৎকারে অল্টম্যান পডকাস্ট উপস্থাপক থিও ভনের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা জানতে চান। ভন জানান, গোপনীয়তা নিয়ে সন্দেহ থাকায় তিনি এটি খুব কম ব্যবহার করেন। জবাবে অল্টম্যান বলেন, আইনি ও গোপনীয়তার বিষয়গুলো পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার না করাটা পুরোপুরি যৌক্তিক। 
সূত্র: টেকক্রাঞ্চ

প্যানেল

×