
ছবি: সংগৃহীত
নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার প্রত্যন্ত সাঁওতাল গ্রাম লক্ষ্মীপুরে দেখা দিয়েছে কৃষির এক আশাজাগানিয়া নবজাগরণ। মাত্র এক বছর আগেও যেসব মাটির ঘরের আশপাশে ছিল খালি ও রুক্ষ জমি, আজ সেসব জায়গায় দেখা যাচ্ছে সবুজে ভরা সবজি ক্ষেত। অনিয়মিত বৃষ্টি ও খরার কারণে এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন কৃষিকাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্র্যাকের ক্লাইমেট অ্যাডাপটিভ অ্যাগ্রিকালচার (জলবায়ু সহনশীল কৃষি) প্রোগ্রামের সহায়তায় এখন এই পল্লির চিত্র বদলে গেছে।
এই কর্মসূচির আওতায় সাঁওতাল কৃষকরা পেয়েছেন খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল বীজ, পানি সাশ্রয়ী সেচব্যবস্থা, মালচিং পদ্ধতি (যেখানে প্লাস্টিক দিয়ে জমি ঢেকে আর্দ্রতা ধরে রাখা হয়), কীটনাশক ফাঁদ, জালের ঘেরা বাগান এবং আধুনিক সার প্রয়োগ কৌশলের প্রশিক্ষণ। এসব প্রযুক্তি ও জ্ঞান তাদের কৃষিকাজে নতুন গতি এনেছে। এখন প্রতিটি বাড়ির পাশে গড়ে উঠেছে সবজি বাগান, যা শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, আর্থিক স্বচ্ছলতাও নিশ্চিত করছে।
এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে নারীদের অংশগ্রহণ। আগে যেখানে নারীরা শুধু গৃহস্থালির কাজ করতেন, এখন তারা নিজেরাই বাগান করছেন, পোকা দমন ফাঁদ তৈরি করছেন এবং পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন।
শুধু সবজি নয়, কৃষির বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে আমবাগানের মধ্যেও এখন চাষ হচ্ছে হলুদ ও অন্যান্য মৌসুমি ফসলের। এতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি, স্থানীয় একটি বড় পুকুর পুনর্গঠন করে সেখানে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার জলাধার। এর তলদেশে পলিথিন বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে পানি নষ্ট না হয়। ফলে খরার সময়েও কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষণ করা যাচ্ছে।
সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো, এই অঞ্চলের কৃষকরা এখন আর বিষ ব্যবহার করছেন না। তারা নিজেরাই তৈরি করছেন ফেরোমন ফাঁদ, যা ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করছে। এসব ফাঁদে পুরুষ পোকা ধরা পড়ে, ফলে প্রজনন বন্ধ হয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে।
সাঁওতাল নারীরা বলছেন, জমির মালিক না হয়েও এইসবজি চাষ তাদের জীবনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এই সফল উদ্যোগ এখন শুধু লক্ষ্মীপুরেই নয়, বরং দেশের অন্যান্য খরা-প্রবণ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের খরা মোকাবিলায় অভিযোজনযোগ্য একটি রোল মডেল।
মুমু ২