ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

মেয়েদের ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৩০ জুলাই ২০২৫

মেয়েদের ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার

ছ‌বি: প্রতীকী

মেয়েদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশন একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে যাদের হাইজিন মেনে চলা কঠিন বা যারা অতিরিক্ত গরম পরিবেশে বেশি সময় থাকেন, তাদের মাঝে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এটি মূলত ইউরিনারি ট্র্যাক্টে জীবাণু প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটালে হয়। এই ইনফেকশনের ফলে বারবার প্রস্রাব লাগা, প্রস্রাবের সময় জ্বালা, তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ বা রক্ত দেখা—এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি হলেও অনেক সময় প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ঘরোয়া প্রতিকার বেশ উপকারে আসে। নিচে মেয়েদের ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

প্রথমেই, বেশি পরিমাণ পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরিন ইনফেকশনের সময় দেহ থেকে জীবাণু বের করে দিতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হয়। দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খেলে প্রস্রাব বেশি হবে এবং এতে ইনফেকশনের জীবাণুগুলো বেরিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

তেঁতুল বা লেবুর শরবত পান করাও উপকারী। এতে ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ইউরিনের অম্লতা বাড়িয়ে জীবাণুর বংশবৃদ্ধি রোধ করে। দিনে অন্তত একবার লেবুর রস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

নারকেলের পানি খুব উপকারী প্রাকৃতিক পানীয়। এটি শুধু শরীরকে ঠান্ডা রাখে না, বরং কিডনি ও মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা বাড়ায়। নারকেলের পানি দেহের টক্সিন দূর করে এবং প্রস্রাবের সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিদিন এক থেকে দুইবার নারকেলের পানি খাওয়া যেতে পারে।

মেথি বীজ ইউরিন ইনফেকশনের জন্য খুব ভালো একটি ঘরোয়া উপাদান। এক চা চামচ মেথি বীজ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। এটি দেহের অম্লতা কমিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

তুলসী পাতার রস ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে কার্যকর। দিনে দুইবার এক চা চামচ তুলসী পাতার রসের সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

দই বা টক দই খাওয়া খুবই উপকারী। এতে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে সক্রিয় করে তোলে, যা খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে। দিনে অন্তত একবার এক বাটি টক দই খেলে ইউরিন ইনফেকশন কমে আসে।

ছোট এলাচ বা দারচিনির মতো মসলা জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। এগুলো চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া, রসুনও একটি ভালো প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন খেলে সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এই রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্রাবের পর ভালোভাবে পরিষ্কার হওয়া, সুতি অন্তর্বাস পরা এবং প্রতিদিন অন্তর্বাস পরিবর্তন করা জরুরি। অতিরিক্ত টাইট পোশাক, সিনথেটিক আন্ডারওয়্যার বা দীর্ঘক্ষণ ভেজা পোশাক পরা উচিত নয়।

প্রস্রাব চেপে রাখা কখনোই উচিত নয়। দীর্ঘসময় প্রস্রাব চেপে রাখলে মূত্রাশয়ে জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই প্রস্রাবের বেগ এলে যত দ্রুত সম্ভব বাথরুমে যাওয়া উচিত।

অনেক সময় গর্ভাবস্থায় বা মাসিকের সময় হরমোন পরিবর্তনের কারণে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। এই সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং বেশি করে পানি পান করা খুবই দরকার।

ইউরিন ইনফেকশন খুব বেশি জটিল পর্যায়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে প্রাথমিক বা হালকা পর্যায়ের সংক্রমণে এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলো মেনে চললে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনই এই সমস্যা থেকে মুক্তির মূল চাবিকাঠি।

এম.কে.

×