ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

"ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কী হয়? জেনে নিন ১০টি ঘরোয়া সমাধান"

প্রকাশিত: ১৯:৪২, ৩০ জুলাই ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ইউরিক অ্যাসিড হলো শরীরের একটি প্রাকৃতিক বর্জ্য পদার্থ, যা পিউরিন নামক উপাদান ভাঙার ফলে তৈরি হয়। পিউরিন মূলত কিছু খাবারে যেমন: লাল মাংস, সামুদ্রিক মাছ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পাওয়া যায় এবং শরীরের অভ্যন্তরেও তৈরি হয়। সাধারণত এই অ্যাসিড কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হলে বা কিডনি ঠিকভাবে বের করতে না পারলে তা রক্তে জমা হতে শুরু করে।

এই অবস্থাকে হাইপারইউরিকেমিয়া বলা হয়, যা গাউট, কিডনিতে পাথর, গাঁটে ব্যথা ও অন্যান্য বিপাকীয় জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। প্রাথমিকভাবে উপসর্গ দেখা না গেলেও, উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড ধীরে ধীরে জয়েন্ট ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

 

 

 

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের সাধারণ কারণসমূহ:

1. পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার (যেমন: লাল মাংস, সামুদ্রিক খাবার, কলিজা ইত্যাদি) বেশি খাওয়া।
2. চিনি ও মিষ্টি পানীয় (বিশেষ করে ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ)।
3. অ্যালকোহল (বিশেষ করে বিয়ার ও স্পিরিটস)।
4. ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানির অভাব।
5. স্বাস্থ্য সমস্যা (স্থূলতা, কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মেটাবলিক সিনড্রোম, ছাতাসরোগ ইত্যাদি)।
6. কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যেমন: ডাইইউরেটিক, অ্যাসপিরিন, ইমিউন সাপ্রেসেন্ট)।
7. বংশগত কারণ, যার ফলে শরীর ইউরিক অ্যাসিড সঠিকভাবে প্রসেস করতে পারে না।

 

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের উপসর্গ:

*গাউট অ্যাটাক: বিশেষ করে পায়ের বুড়ো আঙুলে হঠাৎ তীব্র ব্যথা ও ফোলাভাব।
*কিডনি স্টোন: কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিডের ক্রিস্টাল জমে পাথর তৈরি।
*দুর্বলতা ও ক্লান্তি: সারাদিন অশক্ত লাগা।
*জয়েন্টের অস্বস্তি: সকালে ঘুম থেকে উঠে গাঁটে ব্যথা বা শক্তভাব।

 

 

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ১০টি প্রাকৃতিক উপায়:

১. পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার কমান:
লাল মাংস, কলিজা, কিডনি, সারডিন, অ্যাঙ্কোভি, ঝিনুকজাতীয় খাবার খাওয়া সীমিত করুন।
সবজি থেকেও পিউরিন পাওয়া যায়, তবে তা তুলনামূলক কম ক্ষতিকর।

২. চিনি ও মিষ্টি পানীয় বর্জন করুন:
ফ্রুক্টোজযুক্ত পানীয় ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে তোলে। সফট ড্রিংক, প্যাকেটজাত জুস, চকলেট এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে সম্পূর্ণ ফল খান।

৩. পানি পান করুন:
ইউরিক অ্যাসিড কিডনির মাধ্যমে নির্গত হয়, তাই প্রতিদিন ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন। পানির বোতল সঙ্গে রাখুন ও স্মার্টফোনে রিমাইন্ডার সেট করুন।

৪. অ্যালকোহল ত্যাগ করুন:
বিয়ার ও অন্যান্য অ্যালকোহল ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি করে এবং শরীর থেকে নির্গমনেও বাধা দেয়।

৫. কফি খাওয়ার অভ্যাস করুন (মডারেটভাবে):
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ও পরিমিত কফি ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে চিনি বা হেভি ক্রিমার ব্যবহার করবেন না।

৬. অতিরিক্ত ওজন কমান:
ওজন বেশি হলে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি বাড়ে এবং কিডনি ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ধীরে ধীরে ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন কমান।

৭. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস থাকলে ইউরিক অ্যাসিডের ঝুঁকি বেশি। তাই শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

৮. ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খান:
ওটস, ডাল, ফল, সবজি, ও হোল গ্রেইন খাওয়া ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। দিনে ২২–৩৪ গ্রাম ফাইবার নেওয়ার চেষ্টা করুন।

৯. ভিটামিন সি গ্রহণ করুন:
লেবু, কমলা, স্ট্রবেরি, বেল পিপার, পালং শাক ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে যা ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।

১০. চেরি খান:
চেরি ও টার্ট চেরি জুসে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন, যা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ইউরিক অ্যাসিড কমানোর জন্য কার্যকর। এটি গাউট প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

 

 

 

 

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড প্রাথমিকভাবে নিরব হলেও সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে তা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা ডেকে আনতে পারে। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছু সহজ পরিবর্তন এনে আপনি স্বাভাবিকভাবেই ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারেন। তবে উপসর্গ তীব্র হলে বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

ছামিয়া

×