
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস শুধু একটি রোগ নয়, বরং একে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দ্রুতগতিতে বাড়ছে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস শনাক্ত করা গেলে জীবনধারার কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা বা অনেকাংশে প্রতিরোধ করাও সম্ভব।
ভারতের এক গবেষণা অনুসারে, ২০১৯ সালে দেশটিতে প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ১০ কোটির বেশি এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে তা ১৩ কোটিরও বেশি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ডায়াবেটিস এমন একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যা দেহে চিনি বা গ্লুকোজ প্রক্রিয়াকরণের স্বাভাবিক পদ্ধতিকে ব্যাহত করে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে, কিন্তু অনেক সময় এর সূক্ষ্ম লক্ষণগুলো আমরা বুঝে উঠতে পারি না। নিচে ডায়াবেটিসের এমনই কিছু প্রাথমিক লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে—
১. অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করা
আপনি কি বারবার পানি পান করছেন, তবুও তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন না? এটি হতে পারে ডায়াবেটিসের প্রথম লক্ষণগুলোর একটি। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীর টিস্যু থেকে তরল টেনে নেয়, ফলে দেহে পানিশূন্যতা তৈরি হয় এবং আপনি অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করেন। বিশেষ করে রাতে এ তৃষ্ণা বেড়ে যায় এবং মুখ শুষ্ক বা আঠালো অনুভব হয়।
২. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
আপনি কি সম্প্রতি দিনে বা রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব করছেন? এটি হতে পারে উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে কিডনি অতিরিক্ত পরিশ্রম করে অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমন লক্ষণ দেখা গেলে দেরি না করে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করান।
৩. অযাচিত ও হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়াই যদি হঠাৎ করেই আপনার ওজন কমতে থাকে, তবে এটি চিন্তার বিষয়। শরীর যখন কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না, তখন সে শক্তির জন্য পেশি ও চর্বি ভাঙতে শুরু করে, ফলে ওজন কমে যায়। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে এটি বেশি দেখা গেলেও টাইপ-২ ডায়াবেটিসেও হতে পারে।
৪. সারাক্ষণ দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করা
আপনি কি পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও সারাদিন ক্লান্ত অনুভব করছেন? এটি হতে পারে গ্লুকোজ সঠিকভাবে কোষে প্রবেশ না করার ফলে। কোষে শক্তির অভাবে শরীরে দুর্বলতা তৈরি হয়, যা কফি বা বিশ্রামেও ঠিক হয় না। এটি ডায়াবেটিসের অন্যতম উপেক্ষিত লক্ষণ।
৫. দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ চোখের লেন্স থেকে তরল টেনে নিয়ে চোখের ফোকাসের সমস্যা তৈরি করে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে চোখের রেটিনায় ক্ষতিও হতে পারে, যা ভবিষ্যতে স্থায়ী দৃষ্টিহানির কারণ হতে পারে।
৬. ক্ষত বা কাটা অংশ ধীরে ভালো হওয়া
ডায়াবেটিস রক্ত সঞ্চালন ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। ফলে ছোটখাটো কাটাছেঁড়া বা ক্ষতও সহজে শুকাতে চায় না বা খারাপের দিকে যায়। বিশেষ করে পা বা পায়ের পাতায় এমন সমস্যা বেশি দেখা যায়।
৭. হাত ও পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ অনুভব হওয়া
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হচ্ছে স্নায়ু ক্ষতি বা ‘ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি’। এতে হাত-পা, আঙুল বা পায়ের পাতায় ঝিনঝিন, পোড়া ভাব বা অবশ লাগা শুরু হয়। এটি অজান্তেই ধীরে ধীরে স্নায়ুর ক্ষতি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে তা স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।
শরীর সবসময় আমাদের নানা সংকেত দেয়। এমন ছোট ছোট লক্ষণ অবহেলা না করে সতর্ক থাকুন। রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সুস্থ জীবনযাপন একেবারেই সম্ভব।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব