ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

নারীদের দেহে ডায়াবেটিসের ১০টি গোপন লক্ষণ, অনেকেই অবহেলা করে বাড়ায় বিপদের ঝুঁকি!

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ৩১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:২৪, ৩১ জুলাই ২০২৫

নারীদের দেহে ডায়াবেটিসের ১০টি গোপন লক্ষণ, অনেকেই অবহেলা করে বাড়ায় বিপদের ঝুঁকি!

ডায়াবেটিস এমন একটি নীরব ঘাতক, যা অজান্তেই শরীরের ভেতর নিজের জায়গা করে নেয় কোনো নাটকীয় লক্ষণ ছাড়াই। আপনি হয়তো জানেন যে অতিরিক্ত পিপাসা বা ঘন ঘন প্রস্রাব ডায়াবেটিসের সাধারণ উপসর্গ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নারীদের ক্ষেত্রে এই "ক্লাসিক" লক্ষণগুলো অনেক সময়ই দেখা যায় না, বা এলেও হয়তো পরে আসে। তার চেয়ে বিপজ্জনক হলো ডায়াবেটিসের কিছু ‘লুকিয়ে থাকা’ উপসর্গ, যেগুলো সহজেই অবহেলা করা যায় বা অন্য কিছু বলে ভুল করে বসা যায়।

এ ধরনের গোপন উপসর্গ চিনতে পারা নারীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। আপনার শরীর আপনাকে সতর্ক করছে শুধু বুঝে নিতে হবে সেই ভাষা।

কেন নারীদের ডায়াবেটিসের লক্ষণ এত ‘চুপিচুপি’ আসে?
নারীদের শরীর অনেক সময় সমস্যার ইঙ্গিত দেয় মৃদুভাবে, সরাসরি চিৎকার করে নয়। বিশেষ করে রক্তে শর্করার তারতম্য হলে শরীরে যেসব পরিবর্তন আসে, তার অনেকগুলোই হয় অপ্রচলিত বা ‘কম আলোচিত’। যেমন: যোনি সমস্যার পুনরাবৃত্তি, ত্বকের পরিবর্তন, অথবা হরমোন-জনিত আচরণগত পরিবর্তন, যা অনেক সময় পিএমএস বা মানসিক চাপে বলে ভুল করা হয়।

ডায়াবেটিস সব সময় টিভিতে দেখা আকস্মিক অসুস্থতার মতো করে আসে না। এটি আসতে পারে ধীরে ধীরে এমনকি বছরের পর বছর ধরে শরীরের ভেতর থেকে ক্ষয় সাধন করতে পারে, আপনার অজান্তেই।

১. বারবার যোনিতে ছত্রাক সংক্রমণ
আপনি যদি ঘন ঘন ইস্ট ইনফেকশনে ভোগেন, তবে এটি কেবল ‘দুর্ভাগ্য’ নাও হতে পারে। উচ্চ রক্তে শর্করা ইস্ট সংক্রমণের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে, ফলে চিকিৎসা করলেও সংক্রমণ ফিরে আসতে থাকে। যোনি চুলকানো, পুরু সাদা স্রাব, জ্বালাপোড়া বা যৌনমিলনে অস্বস্তি এসব লক্ষণ অবহেলা করা উচিত নয়। এটি হতে পারে ডায়াবেটিসের শুরুর দিকের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ।

২. নিরবচ্ছিন্ন ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI)
প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না? বারবার প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা তলপেটে ব্যথা হচ্ছে? ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, আর উচ্চ রক্তে শর্করা ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধিকে সহজ করে তোলে। নারীরা এমনিতেই ইউরিন সংক্রমণে বেশি ভোগেন, তার উপর যদি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে না থাকে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এমন অবস্থায় রক্তের সুগার পরীক্ষা করানো জরুরি।

৩. যোনি শুষ্কতা ও যৌনমিলনে অস্বস্তি
ডায়াবেটিস নারীদের হরমোন ভারসাম্য বিঘ্নিত করে এবং যোনির স্বাভাবিক লুব্রিকেশন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। এর ফলে যৌনমিলনের সময় ব্যথা, চুলকানি, বা জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে। অনেকেই menopausal সমস্যা বা মানসিক চাপ ভেবে ভুল করেন। অথচ এর পেছনে থাকতে পারে অজানা ডায়াবেটিস।

৪. ত্বকের গাঢ় দাগ (Acanthosis Nigricans)
ঘাড়, বগল, স্তনের নিচে বা কুঁচকিতে গাঢ়, ঘন, মসৃণ দাগ? এটি হতে পারে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের লক্ষণ যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের আগমনী বার্তা। এই পরিবর্তনকে অনেক নারী হাইজিন সমস্যা বা রঙ পরিবর্তন মনে করে উপেক্ষা করেন।

৫. পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)
নারীদের হরমোনজনিত এই জটিলতা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। অনিয়মিত মাসিক, মুখে বা শরীরে অস্বাভাবিক লোম, ব্রণ, ওজন বেড়ে যাওয়া সব মিলিয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। যদি পিসিওএস ধরা পড়ে থাকে, রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা অবশ্যই প্রয়োজন।

৬. অব্যাখ্যাত ক্লান্তি
রাতভর ঘুমিয়েও ক্লান্ত লাগছে? ইনসুলিনের অভাবে শরীরের কোষগুলো পর্যাপ্ত গ্লুকোজ পায় না, ফলে শক্তি উৎপাদনে ঘাটতি পড়ে। এই ক্লান্তি কফি বা বিশ্রামে কাটে না। যদি এই ক্লান্তির সঙ্গে অতিরিক্ত প্রস্রাব, পিপাসা বা অন্য কোনো উপসর্গ থাকে, সাবধান হোন।

৭. মেজাজের ওঠানামা ও বিষণ্নতা
রক্তে গ্লুকোজের উঠানামা মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। নারী হিসেবে আপনি হয়তো ভাবছেন এটি PMS বা পারিবারিক চাপের ফল, কিন্তু ডায়াবেটিসের সঙ্গে মানসিক সমস্যার যোগসূত্র স্পষ্ট। অব্যবস্থাপিত রক্তে শর্করা উদ্বেগ, রাগ বা বিষণ্নতার জন্ম দিতে পারে।

৮. চোখ ঝাপসা বা দৃষ্টির পরিবর্তন
চোখের ভেতরের তরলের তারতম্য, লেন্সের আকার পরিবর্তন, এবং রেটিনায় রক্তনালির ক্ষতি এসবই ডায়াবেটিসের প্রভাবে ঘটতে পারে। ঘন ঘন চোখ ঝাপসা হওয়া, ডাবল ভিশন বা চোখের ক্লান্তি দেখা দিলে দৃষ্টিশক্তি ও রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করিয়ে নিন।

৯. ধীরগতিতে কাটাছেঁড়া সেরে ওঠা
হাত বা পায়ে ছোট খাটো ক্ষত, দাঁতের মাড়ি, এমনকি অস্ত্রোপচারের ক্ষত যদি দীর্ঘদিন থাকে রক্তে উচ্চ শর্করার কারণে এটি হতে পারে। রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষত নিরাময় ধীর হয়ে পড়ে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এটা শুধু বিরক্তিকর নয়, হতে পারে একটি গুরুতর সতর্কবার্তা।

১০. হাত-পায়ে ঝিনঝিনি বা অবশভাব
আঙুল বা পায়ের পাতা হালকা ঝিনঝিনে? এটি হতে পারে ডায়াবেটিসজনিত নার্ভ ড্যামেজের (ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি) প্রাথমিক লক্ষণ। একে অনেকেই ঘুমের ভুল ভঙ্গিমা বা রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা মনে করেন, কিন্তু এটি অবহেলা করলে স্থায়ী স্নায়ু ক্ষতি হতে পারে।


কারণ অব্যবস্থাপিত ডায়াবেটিস হৃদরোগ, স্ট্রোক, অন্ধত্ব, কিডনি ও স্নায়ু ক্ষতি, গর্ভধারণে জটিলতা, এমনকি প্রাণঘাতী সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

তাহলে কী করবেন? শরীরের কথা শুনুন। যেকোনো নতুন উপসর্গকে শুধু স্ট্রেস ভেবে উড়িয়ে দেবেন না। বিশেষ করে যদি আপনি পিসিওএসে ভোগেন, অতিরিক্ত ওজন থাকে, বা পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করিয়ে নিন।

আপনার শরীর আপনাকে ইশারা দেয় সবসময় ব্যাপারটা শুধু বোঝার অপেক্ষা। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে আপনি দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা এড়াতে পারবেন, আর নিজের সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবেন আজ থেকেই।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/4uze96n7

আফরোজা

×