
সম্প্রতি দক্ষিণ সিরিয়ায় অভ্যন্তরীণ সংঘাতে প্রায় ৯৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি অব হিউম্যান রাইটসের মতে, সংঘাতটি সাম্প্রদায়িক রূপ পরিগ্রহ করেছে। গত ১৩ জুলাই থেকে সুয়েইদা প্রদেশে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডে ‘উল্লেখযোগ্য বর্বরতার প্রাদুর্ভাব’ রেকর্ড করেছে সংস্থাটি। বেদুইন ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের ফলেই সংঘাত শুরু হয়েছিল। সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা সত্ত্বেও দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অব্যাহত ছিল। দেশটির সুয়েইদা প্রদেশে সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায় সশস্ত্র বেদুইনদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। উভয়পক্ষের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে। সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা সৈন্য মোতায়েন করলেও সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধেও দ্রুজদের ওপর হামলায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট এক লাখ ২৮ হাজার ৫৭১ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ১৯ জুলাই এক দিনেই ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ সোয়েইদা প্রদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গত ১৪-১৬ জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণ সিরিয়ার সুয়েইদা ও এর আশপাশের এলাকায় সরকারি বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে অন্তত ১৬০টি আঘাত হেনেছে। ইসরাইলি হামলায় ১৫ জন সরকারি লোক নিহত হয়েছে। ইসরাইল বলছে, তারা দ্রুজদের রক্ষা করতে ও সরকারি বাহিনীকে সুয়েইদা থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করার জন্যই এই হামলা চালিয়েছে। সুয়েইদায় ধর্মীয় দ্রুজ সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার অজুহাতে ইসরাইল সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে। সিরীয় দ্রুজদের জন্য স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামরিক অভিযান চালাতে প্রস্তুত রয়েছে ইসরাইল। একই সঙ্গে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ শারার নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার সরকারকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলাকে ‘সতর্কতামূলক হামলা’ বলে আইডিএফ অভিহিত করে। ইসরাইলের এই হামলাকে সিরিয়া তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটিকে ‘বিপজ্জনক পরিস্থিতির তীব্রতা বৃদ্ধি’ বলে অভিহিত করেছে। ইসরাইলের এই আক্রমণকে সিরিয়া ‘প্রকাশ্য হামলা’ বলে অভিহিত করেছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইচ্ছাকৃতভাবে সিরিয়ার উত্তেজনা বৃদ্ধি, বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেওয়া এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছে। ইসরাইল এমন সময় হামলা চালিয়েছে, যখন সিরিযার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুরহাফ আবু কাসরা দ্রুজ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর সুয়েইদায় পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। দামেস্কে ইসরাইলের ব্যাপক হামলার পর সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা অভিযোগ করেছেন, সিরিয়াকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে ইসরাইল। তিনি বলেন, সিরীয় ঐক্য ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে ইসরাইল। তারা সিরিয়ার স্থিতিশীলতাকে ক্রমাগত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে এবং বাশার-আল আসাদের পতনের পর থেকে সিরীয়দের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে। দ্রুজ জনগোষ্ঠীর লোকদের রক্ষার দায়িত্ব সিরিয়া সরকারের বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দ্রুজরা আরবিভাষী একটি জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী; যারা সিরিয়া, লেবানন, ইসরাইল এবং ইসরাইলের অধিকৃত গোলান মালভূমিতে বসবাস করে। বিশে^ আনুমানিক ১০ লাখ দ্রুজ জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে, যাদের অর্ধেকই সিরিয়ায় বসবাস করে। সিরিয়ার রাজনীতিতে দ্রুজরা সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে ছিল। প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় তারা দক্ষিণ সিরিয়ায় নিজেদের মিলিশিয়া গড়ে তোলে। গত ডিসেম্বর মাসে আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে দ্রুজরা দক্ষিণ সিরিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টার বিরোধিতা করে আসছে। তবে দ্রুজদের অনেকেই সুয়েইদা সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি মানতে চায় না এবং সিরীয় সেনাবাহিনীতে যুক্ত না হয়ে মিলিশিয়াদের ওপরই ভরসা রাখছে। ইসরাইলের সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত হামলাগুলো শুধু দ্রুজদের রক্ষার উদ্দেশ্যে নয়; বরং এর পেছনে ইসরাইলি সরকার ও সংকটে থাকা নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই রয়েছে বেশি। ইসরাইলের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কনসাল জেনারেল আলোন পিনকাস আল-জাজিরাকে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এটি পুরোপুরি সুযোগসন্ধানী বিষয়। ইসরাইল যেহেতু আরেক আঞ্চলিক জাতিগোষ্ঠী কুর্দদের সহযোগিতা করেনি, তাই দ্রুজদের রক্ষা করার কথা বলাটা মূলত ছলচাতুরী। ইসরাইলিরা প্রকৃতপক্ষে দ্রুজদের নিয়ে ভাবে না। এটা হচ্ছে আরেকটা নতুন হুমকি, নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। সিরিয়ায় ইসরাইলের হামলার পেছনে পিনকাস কয়েকটি উদ্দেশ্যের কথা বলেন। নেতানিয়াহু যুদ্ধকালীন নেতা হিসেবে নতুন করে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চান। নিজের দুর্নীতির মামলার বিচার বিলম্বিত করারও চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে গত ২১ মাসে শুধু সামরিক শক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে পুনর্গঠনের ভ্রান্ত ধারণাকে জোরদার করার চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, নেতানিয়াহু চান না সিরিয়ায় একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গড়ে উঠুক। বরং তিনি চান একটি দুর্বল রাষ্ট্র; যার এক অংশ কুর্দদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, অন্য অংশ দ্রুজ ও বেদুইনদের দখলে থাকবে। এতে করে দক্ষিণ সিরিয়ায় নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারবে ইসরাইল। সিরিয়াকে দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবে দেখতেই পছন্দ করে ইসরাইল। কারণ তারা মনে করে, শক্তিশালী হয়ে উঠলে দেশটি ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, ইসরাইল ইচ্ছা করেই তাদের দেশে উত্তেজনা উসকে দেওয়া, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করার নীতি গ্রহণ করেছে। উত্তেজনা বৃদ্ধির পাশাপাশি ইসরাইল সিরিয়ার সরকারের দুর্বলতাগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য কৌশলগতভাবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছে। ইসরাইলের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সংগ্রামরত সিরিয়ার সরকারকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরে ক্ষমতার গতিশীলতা পুনর্গঠন করতে পারে। এটি ক্ষমতার একটি সিদ্ধান্তমূলক পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করবে নাকি অঞ্চলটিকে আরও বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত করবে- তা এখন দেখার বিষয়। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, দামেস্কের জন্য যে ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে, তার সুদূরপ্রসারী পরিণতি এমন হতে পারে যা এর সীমানা ছাড়িয়ে আরও বিস্তৃত হবে। রুশ গণমাধ্যম স্পুটনিককে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার সোশ্যাল ন্যাশনালিস্ট পার্টির সদস্য তারেক আহমেদ বলেন, ইসরাইল সম্ভবত আহমেদ শারা’র জন্য একটি ফাঁদ তৈরি করেছিল। তারা তাঁকে একটি খুব আশাবাদী ভবিষ্যৎ দেখিয়েছিল। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, সৈন্যদের সুয়েইদা প্রদেশে পাঠাতে পারবেন। ইসরাইলের নিকট এখন সুয়েইদায় নয়, দামেস্কেও বোমা হামলা চালানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইসরাইলি হামলাগুলোর লক্ষ্যবস্তু ছিল দামেস্কের কেন্দ্রস্থল তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সামরিক সদর দপ্তর এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশের এলাকা। ইসরাইলের এই হামলাকে সিরিয়া আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে। ইসরাইলিরা সিরিয়ার সরকারকে সমগ্র ভূখণ্ডে কর্তৃত্ব বিস্তার করতে দেবে না। আসাদ সরকারের পতনের পর এবং নতুন নেত্বত্বের ওপর ইসরাইল তার ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দামেস্কে অবস্থিত ওমরান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক আম্মার কাহফ বলেছেন, আমরা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, তবে এর জন্য সমস্ত সিরিয়ানকে একত্র হতে হবে। একটি বিদেশি সরকার এসে জনসাধারণের সম্পত্তি ধ্বংস করবে এবং নিরাপত্তা ধ্বংস করবে। ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে ইসরাইল সিরিয়ায় অসংখ্যবার হামলা চালিয়েছে এবং প্রায় ১৫৫ বর্গমাইল এলাকা দখল করেছে। এছাড়া ১৯৬৭ সাল থেকে সিরিয়ার পশ্চিম গোলান মালভূমি ইসরাইল নিয়ন্ত্রণ করছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সব পক্ষের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ করেছে। ভয়াবহ এই পরিস্থিতি থামাতে ঐকমত্য হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে জিহাদিদের প্রবেশ এবং গণহত্যা চালানোকে বাধা দিতে হবে। যারা নৃশংসতার জন্য দায়ী, এমনকি সরকারের নিজস্ব সদস্যরাও যদি হয়, তাদেরও বিচারের আওতায় আনার কথা বলেন তিনি। লেবানন, ইরাক, কাতার, জর্ডান, মিসর, কুয়েতসহ একাধিক আরব রাষ্ট্র সিরিয়ার সরকারি ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ইরাইলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) মহাসচিব জাসেম মোহাম্মদ আলবুদাইউই বলেন, ইসরাইলি হামলা সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক আইন ও মানদণ্ডের অবমাননা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি। তিনি সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি জিসিসির সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এই হামলার ধারাবাহিকতা দায়িত্বজ্ঞানহীন উসকানি এবং সিরিয়া ও ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার ওপর আস্থার অভাব প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ওয়াশিংটনে প্রদত্ত এক বক্তব্যে তিনি বলেন, শারার মতো নেতার ওপর কোনোভাবেই বিশ^াস রাখা যায় না। এই নতুন প্রেসিডেন্ট জিহাদিবাদী গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে সিরিয়ার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে এই গোষ্ঠীগুলোকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা চালানোর মাঝেই ইসরাইলি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা লিনা সিনজাব জানিয়েছেন, দ্রুজদের ওপর সহিংসতা পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টুর্কও জানিয়েছেন, তারা হত্যা, নিপীড়নসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্ট পেয়েছেন। স্থানীয় সশস্ত্র দ্রুজ এবং বেদুইন ছাড়াও হামলাকারী অনেকে সরকারি বাহিনীর সদস্য। তিনি বলেছেন, এই রক্তপাত ও সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। যারা এমন সহিংসতায় সম্পৃক্ত তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার সরকার সংখ্যালঘুসহ সকলের সুরক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। কেউই জবাবদিহিতার বাইরে থাকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও সংহতির প্রতি সৌদি আরব জোরালো সমর্থন জানিয়েছে। একই সঙ্গে সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। সৌদি আরব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সিরিয়ার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে এবং অব্যাহত হামলার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার দাবি করেছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জনিয়েছে, সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি উদ্বেগের সঙ্গে রিয়াদ পর্যবেক্ষণ করছে এবং দেশের বিভিন্ন অংশে নিরাপত্তা, শান্তি ও রাষ্ট্রের পূর্ণ কর্তৃত্ব পুনর্প্রতিষ্ঠায় সিরিয়ার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। ইসরাইলের ‘স্পষ্ট আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’ এবং ১৯৭৪ সালের বিচ্ছিন্নকরণ চুক্তি ভঙ্গের ঘটনাকে নিন্দা করে সৌদি আরব জানিয়েছে, ইসরাইলের বারবার হামলা এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ সিরিয়ার সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ফোনে আলাপ করেছেন। এরদোগান জানিয়েছেন, সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা ইসরাইলের উচিত নয়। সিরিয়ায় নতুন করে সংঘাত সমগ্র অঞ্চলের জন্য হুমকিস্বরূপ। আর রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন বলছে, উভয় নেতা সংলাপের মাধ্যমে এবং জাতীয় ঐকমত্য জোরদার করে সিরিয়ার পরিস্থিতি দ্রুত স্থিতিশীল করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আঙ্কারায় মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর এরদোগান বলেন, সিরিয়ার দ্রুজ গোষ্ঠীকে অজুহাত বানিয়ে দেশটিতে ইসরাইল আগ্রাসন চালাচ্ছে। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, সিরিযার ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় তুরস্ক কখনোই কোনো ধরনের বিভাজন মেনে নেবে না। ইসরাইল একটি আইনবহির্ভূত, নীতিহীন, দাম্ভিক, লালসায় মগ্ন এবং রক্তপিপাসু সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে এরদোগান অভিযোগ করেন। একটি স্থিতিশীল সিরিয়া পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। অন্যথায় এর বোঝা সকলকেই বহন করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তুরস্কে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত টম ব্যারাক ইসরাইল ও সিরিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশটি একটি সংকটপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমরা দ্রুজ, বেদুইন এবং সুন্নিদের অস্ত্র নামিয়ে ফেলা এবং অন্য সংখ্যালঘু সবাই মিলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি ও উন্নতির একটি নতুন সিরিয়ান পরিচয় গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, তুরস্ক, জর্ডান এবং প্রতিবেশী দেশগুলোকে এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই সমঝোতার আওতায় ইসরাইলের সামরিক হামলা বন্ধের বিষয়টিও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তিটি দ্রুজ নাগরিকদের সুরক্ষার শর্তে ইসরাইল অনুমোদন করেছে। চুক্তিটিকে একটি কূটনৈতিক মাইলফলক বলা হচ্ছে; যা মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিভাজন নিরসনের লক্ষ্যে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্যানেল/মো.