
ফুলের মতো বাচ্চাগুলোর ছবি এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঝলসে যাওয়া দেহ, নেইমপ্লেটে তাজা রক্তের দাগ আর মাটিতে লুটিয়ে পড়া নিথর দেহ। চারপাশে শুধুই আর্তনাদ এবং আর্তচিৎকার। গলায় ঝুলানো রক্তে মাখা আইডি কার্ডে পরিচয় হিসেবে আছে শুধু নাম, রোল নম্বর এবং ছবি, নেই কোনো ব্যক্তিগত তথ্য ব্লাড গ্রুপ কিংবা ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট নম্বর। অন্যদিকে অভিভাবকগণ দিশেহারা হয়ে দিগি¦দিক খুঁজছে তার আদরের সন্তানকে। ‘কোথায় আমার কলিজার টুকরা? ঠিক আছে তো?’ তারা জানে না তার আদরের সন্তান আদৌ বেঁচে আছে কিনা, কেউ কেউ তো হতাশ হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে সন্তানের শেষ চিহ্নটুকু! এমনি ঘটনার সাক্ষী আজ পুরো দেশবাসী।
২১শে জুলাই রাজধানীর মাইলস্টোন কলেজে ঘটে যাওয়া সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা আমাদের কাঁদিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার থেকেও ভয়ঙ্কর এই তথ্যগত বিশৃঙ্খলা। আজ যারা হাসপাতালের করিডোর কিংবা স্কুলের প্রত্যেকটা কোনায় তন্ন তন্ন করে তার আদরের সন্তানকে খুঁজছে, তারা চায়নি কোনো নাম বা ছবি; তারা চেয়েছিল নিশ্চিত তথ্য ‘আমার বাচ্চাটা কোথায়?’ কিংবা একটা আশ্বাস ‘আমার সন্তান ঠিক আছে’ কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছে শুধুই হতাশা। আজ মাইলস্টোন কলেজের বাইরে যখন উদ্ধারকর্মীরা ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের ঝলসানো দেহ কাঁধে করে নিয়ে তাদের বাঁচানোর শেষ প্রচেষ্টাটুকু চালাচ্ছিল তখন তাদের সম্মুখে পাচিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘বাচ্চাটির ব্লাড গ্রুপ কি?’ কিংবা তার ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্যভিত্তিক সমস্যা। সময়মতো রক্ত দিলে হয়ত অনেক শিশুকেই আজ বাঁচানো যেত। ফুলের মতো প্রাণগুলোকে আজ অকালেই ঝরে যেতে হতো না।
এর দায়ভার আসলে কার? আমরা সারা বছর ধরেই শুধু কাগজে-কলমে নাম লিখি, বছরে বহুবার প্যারেন্টস মিটিং ডাকি, আর অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার পর শুধুই চোখের জল ফেলি। তবে প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নিই না। আর কতবার? আর কতবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে আমাদের শিক্ষা হবে? আর নয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের শেখাচ্ছে শুধু ‘নাম আর ছবি’ নয়, শিক্ষার্থীর নিরাপত্তায় দরকার সম্পূর্ণ, সুনির্দিষ্ট, নির্ভুল ও সংরক্ষিত তথ্য। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সচেতনতা, পুর্বপ্রস্তুতি এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা। শুধু নাম, ছবি, রোল নম্বর দিয়ে চিকিৎসা চলে না, খোঁজ চলে না। চলে না উদ্ধার কাজও। আইডি কার্ডে উল্লেখ করতে হবে ব্যক্তিগত এবং বিস্তারিত তথ্য, ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট, ব্লাড গ্রুপ, রোগ, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য এবং প্রয়োজনীয় সেই সকল তথ্য যা থাকলে পরবর্তীতে আর কোনো মা-কে ‘আমার সন্তান কোথায়?’ বলে আর্তনাদ করতে হবে না, কোনো বাবাকে তার সন্তানের দেহাবশেষ কোলে নিয়ে চোখের পানি ফেলতে হবে না কিংবা প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে কোনো নিষ্পাপ প্রাণকে আর অকালে ঝড়ে যেতে হবে না। আর ছবির নিচে শোক নয়, চাই নিরাপদ ভবিষ্যৎ!
জোবায়েদা ইসলাম জয়া
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্যানেল/মো.