
অতিরিক্ত দামে সার কিনতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন দেশের কৃষক সমাজ। চলতি আমন মৌসুম ঘিরে গ্রামীণ জনপদে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন আওয়ামী সমর্থক এক দল ডিলার। অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে, সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। সার সংকটের নেপথ্য নায়কদের ধরতে ও আওয়ামী বলয় ভাঙতে সরকার মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের ডিলারশিপ বাতিল এবং একটি নতুন নীতিমালা তৈরির জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছে কৃষি মন্ত্রণালয়, যা খুবই ইতিবাচক দিক।
দেশের মাঠ পর্যায়ের কৃষককুল অভিযোগ করছেন, গত আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পর সরকার বদলের এক বছর হলেও সারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে নিয়োগ পাওয়া ডিলাররা। যাদের অধিকাংশই পালিয়ে গিয়েছে কিন্তু তাদের লাইসেন্সের নামে সার বরাদ্দ চলছে। পলাতক আওয়ামী নেতাদের পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে সারের লাইসেন্স রয়েছে। শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকেই এই দুর্বৃত্তরা কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টি করে দেশের কৃষকদের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাতে চায়। এ বিষয়ে সরকারকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, যেন কোনো কুচক্রী গণ-অভ্যুত্থানকে ম্লান করতে না পারে।
গ্রামে-গঞ্জে খুচরা দোকানে সার কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। কৃষকদের অভিযোগ, যে সার সরকারি দরে ডিলারদের কাছ থেকে পাওয়ার কথা, তা মিলছে না। অথচ গ্রামের বাজারে সারের অভাব নেই।
ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়ার তিন ধরনের সার মাঠ পর্যায়ে সরকারি ডিলার পয়েন্টে নেই। অথচ এ সারই বাড়তি দামে খুচরা পর্যায়ের ডিলারদের কাছে পাওয়া যায় অনায়াসে। এখানে বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। তাদের চক্রের ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিকুল। সারাদেশে বিএডিসি ও বিসিআইসির সারের ডিলার রয়েছে ৭ হাজার ১৫০ জন। এসব ডিলারের সিংহভাগই আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত।
বিসিআইসি সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ-সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০০৯-এর ৩.২ উপধারায় উল্লেখ আছে, ‘নিজ মালিকানায় অথবা ভাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভায় বিক্রয়কেন্দ্রসহ কমপক্ষে ৫০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম থাকতে হবে।’ এই নীতিমালার আলোকে দেশের অধিকাংশ ডিলারের সেই সক্ষমতা নেই। অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়নভিত্তিক ডিলার নিয়োগের নিয়ম থাকলেও অনেক ডিলার নিজের ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা নন। ফলে তারা উপজেলা শহর বা অন্য এলাকায় ব্যবসা চালিয়ে কৃষকদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন।
এতে কৃষকদের পরিবহন ব্যায় বেড়ে যায়। সারের সিন্ডিকেট ভাঙতে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ-সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০২৫’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ১০ আগস্টের মধ্যে চাওয়া হয়েছে উপজেলা ও জেলা সার এবং বীজ মনিটরিং কমিটির মতামত। ইতোমধ্যে ডিলারদের তথ্য চেয়ে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সব ডিলারের তথ্য হালনাগাদ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, সরকারের এ উদ্যোগ এবার আলোর মুখ দেখবে, দেশের কৃষককুল নতুন সম্ভাবনায় জেগে উঠবে এবং ভোগান্তি মুক্ত হয়ে ১৭ কোটি মানুষের মুখে অন্য জোগান দেবে।
প্যানেল/মো.