
প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচের পরও ডুবছে চট্টগ্রাম নগর। সম্প্রতি ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় বিভিন্ন এলাকা। ফলে সেই পুরানো দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। অথচ এর আগে চলতি বছরের ৩০ মে ১৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতেও এমন জলাবদ্ধতা হয়নি। এবারের জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নালা ও খালগুলো ভরাট হলেও ঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। আর প্রকল্পের কাজগুলোতেও কিছু ত্রুটি রয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে নগরের খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার থাকায় জলাবদ্ধতা হয়নি। জলাবদ্ধতা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কর্মকর্তারা প্রকৃতির ওপর দায় চাপিয়েছেন। তাদের দাবি, নালা ও খালগুলো পরিষ্কার আছে। গতবারের তুলনায় এবার বৃষ্টির তীব্রতা বেশি থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে আবার সভা করবেন।
পাল্টাপাল্টি দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কর্তৃপক্ষ। সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সিডিএর আওতায় খালগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু নালা-নর্দমাগুলো ভরাট হয়ে আছে। এতে বৃষ্টির পানি খালে পৌঁছাতে না পারায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। আর এখনো সব জলকপাটের কাজ শেষ না হওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। আর্থিক জটিলতায় বন্ধ থাকা হিজড়া খাল প্রশস্ত করার কাজ আগামী শুষ্ক মৌসুমে শুরু করবেন তারা। এরপর আরও বেশি সুফল পাওয়া যাবে। তবে সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা দাবি করেছেন, নালা-নর্দমা পরিষ্কার থাকলেও বৃষ্টির তীব্রতা বেশি থাকায় পানি দ্রুত সরতে পারেনি। এতে জলাবদ্ধতা হয়েছে। সিডিএ হিজড়া খালের কাজ না করার কারণেও আশপাশের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
একটি আধুনিক নগরীতে জলাবদ্ধতার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো আমাদের মহানগরগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় এবং মরণাপন্ন দশায় উপনীত হওয়ার পরও সাবধানতা অবলম্বন করে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় এগুলো এখন জলাবদ্ধতার শিকার। শুধু জলাবদ্ধতা না বলে এটাকে মহাজলাবদ্ধতা বললেই বোধকরি সঠিক হবে। অন্তত এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার রেকর্ড হওয়ায় একথা নির্দ্বিধায় বলা চলে। আশ্বাসেই কাটছে যুগের পর যুগ। জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলছে না চট্টগ্রাম নগরবাসীর। বরং প্রতি বছরই বাড়ছে পানির উচ্চতা। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এখন উঁচু এলাকাতেও পানি উঠছে। উঁচু নিচু এলাকা সর্বত্র অথৈ পানিতে সয়লাব। কেন্দ্রীয় মহাপরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নই বাঁচাতে পারে চট্টলাবাসীকে।
জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে স্থায়ী এবং দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। এজন্য প্রাকৃতিক জলাধার, খাল-বিল ও লেকের সংস্কার করে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শহরে খোলা জায়গা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। মাটি উন্মুক্ত রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে মাটির নিচে পানি পৌঁছতে পারে। পার্ক, লেক, পুকুরের সংখ্যা বাড়ানোও জরুরি। জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
প্যানেল/মো.