
ছবি : সংগৃহীত
মায়ের স্নেহমাখা একটি চুমু যে কোনো শিশুর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। আমরা যুগ যুগ ধরে এই দৃশ্যকে কেবলই মা ও সন্তানের মধ্যকার নিখাদ ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে দেখে এসেছি। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, এই সাধারণ চুমুর পেছনে লুকিয়ে আছে এক জটিল ও বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া, যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে এক মহৌষধের মতো কাজ করে। এটি কেবল আবেগ নয়, বরং মা ও শিশুর মধ্যে এক শক্তিশালী জৈবিক সংযোগ স্থাপন করে।
মস্তিষ্কের রসায়ন: ভালোবাসা ও সুরক্ষার হরমোন
যখন একজন মা তার সন্তানকে চুমু খান, তখন তার মস্তিষ্কের ‘প্লেজার সার্কিট’ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সময় নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে ডোপামিন নিঃসৃত হয়, যা মাকে আনন্দের অনুভূতি দেয়। একই সাথে নিঃসৃত হয় অক্সিটোসিন, যা ‘লাভ হরমোন’ বা ভালোবাসার হরমোন নামে পরিচিত। এই অক্সিটোসিনই সন্তানের প্রতি মায়ের বাঁধনকে আরও দৃঢ় করে এবং তাকে সুরক্ষিত রাখার প্রবণতা বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
শিশুর জন্য মানসিক প্রশান্তি
অন্যদিকে, মায়ের চুমু শিশুর মস্তিষ্কে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মায়ের স্পর্শ ও চুমু শিশুর শরীরে কর্টিসল নামক ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে কমিয়ে দেয়। ফলে শিশু অনেক বেশি শান্ত, নিরাপদ ও সুরক্ষিত বোধ করে। এই স্নেহভরা মুহূর্তগুলো শিশুর স্নায়ুতন্ত্রকে স্থির করে এবং তার মানসিক স্বাস্থ্যের এক মজবুত ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অদৃশ্য বর্ম
সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্যটি হলো, মায়ের চুমু শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সরাসরি সাহায্য করে। যখন মা শিশুকে চুমু খান, তখন তিনি তার অজান্তেই শিশুর ত্বক থেকে নমুনা হিসেবে কিছু জীবাণু (প্যাথোজেন) গ্রহণ করেন। মায়ের শরীর তখন সেই নির্দিষ্ট জীবাণুগুলোকে শনাক্ত করে সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডিগুলো পরবর্তীতে মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং তাকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ, মায়ের চুমু শিশুর জন্য একটি প্রাকৃতিক ও ব্যক্তিগতকৃত টিকার মতো কাজ করে।
ব্যথানাশক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
ছোটখাটো আঘাতে শিশুরা কেঁদে উঠলে মায়েরা প্রায়ই সেখানে একটি চুমু দিয়ে দেন। এটি শুধু সান্ত্বনা নয়, এর পেছনেও রয়েছে বিজ্ঞান। অক্সিটোসিন হরমোনের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক ক্ষমতা রয়েছে। মায়ের চুমুর মাধ্যমে শিশুর মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় তার ব্যথার অনুভূতি কমে আসে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শৈশবের এই ইতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলো শিশুর মস্তিষ্কের গঠনকে প্রভাবিত করে। যে শিশুরা পর্যাপ্ত স্নেহ ও ভালোবাসা পায়, তাদের মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী অংশগুলো অনেক বেশি সুগঠিত হয়। এর ফলে ভবিষ্যতে তাদের আত্মবিশ্বাস, সামাজিক দক্ষতা এবং অন্যের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং, মায়ের একটি সাধারণ চুমু কেবল একটি আবেগঘন মুহূর্ত নয়। এটি একাধারে একটি জৈবিক প্রতিষেধক, একটি মানসিক ওষুধ এবং শিশুর সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য প্রকৃতির দেওয়া এক অমূল্য উপহার। এটি বিজ্ঞান ও ভালোবাসার এক অপূর্ব মেলবন্ধন, যা মা ও শিশুর সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।
Mily