ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ঢাকা জাদুঘর ও বেঙ্গল স্টুডিও চালুর অপেক্ষা

দর্শনার্থীদের জন্য খুলে গেল ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন

মনোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ০০:১১, ৩১ জুলাই ২০২৫

দর্শনার্থীদের জন্য খুলে গেল ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন

পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের ঐতিহাসিক স্থাপনা রোজ গার্ডেনের সামনে অতিথিরা

বিশ শতকের গোড়ার দিকে ঢাকায় গড়ে উঠেছিল অনন্য স্থাপত্যশৈলীর কিছু স্থাপনা বা প্রাসাদ। তেমনই এক ঐতিহাসিক স্থাপনা পুরান ঢাকার কেএমদাস লেনের ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন। দেশ বিভাগের পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এই ভবনে। এখানে আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন অনেক বিখ্যাত রাজনীতিবিদ। এক সময় এই স্থাপনাকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংরক্ষিত  পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
পরবর্তীতে পুরান ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে ধরে সর্বসাধারণের জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২২ সালে একটি সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। অবশেষে সেই আকাক্সক্ষা পূরণ হলো। পুরান ঢাকাবাসীর জন্য প্রতিষ্ঠিত বিনোদন কেন্দ্রটি খুলে গেল বুধবার সকালে।

এদিন সকাল  থেকে বিকেল অবধি অনেকেই টিকিট কেটে প্রবেশ করেছেন রোজ গার্ডেনে। ঘুরে বেড়িয়েছেন রোজ গার্ডেনের সুদৃশ্য দ্বিতল ভবনটিতে। উপভোগ করেছেন ভবনে রাখা নবাবী আমলের আসবাবপত্রসহ বাইরের সবুজ ঘাস, জলাশয় এবং  নানা প্রজাতি বৃক্ষসহ লতা-পাতায় শোভিত বিস্তৃত আঙিনায়।
রোজ গার্ডেনের তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে টিকিট ব্যবস্থা প্রচলন চালু করে দেওয়া হয়। এদিকে ­মূল ভবনসহ গোটা আঙিনা উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও রোজ গার্ডেনের অন্তর্ভুক্ত ঢাকা জাদুঘর ও বেঙ্গল স্টুডিও এখনও চালু হয়নি। ঢাকা জাদুঘর ও বেঙ্গল স্টুডিওর কাঠামোগত নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও জনবল নিয়োগ না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু হয়নি।  ঢাকা জাদুঘর ও বেঙ্গল স্টুডিওর তত্ত্বাবধানে  রয়েছে জাতীয় জাদুঘর ও শিল্পকলা একাডেমি।
বুধবার সকালে টিকিট ব্যবস্থা চালুকরণের মাধ্যমে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের জন্য রোজ গার্ডেন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। উদ্বোধনের প্রথমদিনে টিকিট কেটে প্রবেশকারী দর্শনার্থীদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। টিকিট চালুকরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাবিনা আলম। এ সময়  আরও উপস্থিত ছিলেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি মো. আসিফুুর রহমান ভূঁইয়া, শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সচিব সাজ্জাদ হোসেন, প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা প্রমুখ। 
এ বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জনকণ্ঠকে বলেন,  সংরক্ষিত প্রতœস্থল রোজ গার্ডেন চত্বরে অবস্থিত মূল ভবন সংস্কার-সংরক্ষণ  কাজ সম্পন্ন করে এটি সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলো। এই বিনোদন কেন্দ্রটি একদিকে যেমন পুরান ঢাকাবাসীর সময় কাটানোর জন্য স্বস্তির আঙিনা হবে, অন্যদিকে এর মাধ্যমে  সরকারে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করি, কিছুদিনের মধ্যেই দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকবে এই প্রতœস্থল। 
এদিন দুপুরে  রোজ গার্ডেন পরিদর্শনে এসেছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী জাহানারা হোসেন রোজ। আলাপচারিতায় এই দর্শনার্থী বলেন, এটি  পুরান ঢাকার মানুষের সময় কাটানোর জন্য একটি চমৎকার স্থানে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে ঐতিহাসিক ভবন এবং গাছপালাসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিশেল থাকায় জায়গাটি সহজেই মানুষকে কাছে টানবে।

বেঙ্গল স্টুডিও চালু না হওয়া প্রসঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা জনবল নিয়োগের অপেক্ষায় আছি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে লোকবল নিয়োগ দিলেই এটি চালু হবে। এ বিষয়ে বৈঠকও হয়েছে।  লোকবল পাওয়ার পর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে এটি দ্রুত চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। ঢাকা জাদুঘর কবে চালু হবেÑ এ প্রশ্নের জবাবে জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে লোকবল পাওয়া মাত্রই এটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। নিউ ক্ল্যাসিকাল গ্রিক স্থাপত্যশৈলীর রোজ গার্ডেনের মূল প্রাসাদোপম ভবনটি সংরক্ষণ ও সংস্কারের কাজটি করেছে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর।

দ্বিতল ভবনটির নিচতলায় পাঁচটি এবং দোতলায় চারটি কক্ষ রয়েছে। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর এই ভবনটির সৌন্দর্য অপরিবর্তিত রেখে সম্পন্ন হয়েছে সংস্কার কাজ। ভবনের স্থাপত্যশৈলী অক্ষুণœ রাখার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  সেই সুবাদে হুবহু একইরকম ও অবিকৃত কাঠামোয় রূপ পেয়েছে দালানটি। এজন্য প্রতœতত্ত্ববিদদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণের শুরুতে ভবনটির ডকুমেন্টশন করা হয়েছে। তারা ভবনের প্রতিটি ইট থেকে ভাস্কর্য কিংবা সিঁড়িসহ সব ডকুমেন্টেশন করে কাজ সম্পন্ন করেছে।

কালের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষ্যবহ এই ভবনটি দৃষ্টিনন্দন রূপে আবির্ভূত হয়েছে দর্শনার্থীদের কাছে। এই প্রাসাদ চত্বরের সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা বড় লন এবং মাঝখানে রয়েছে একটি পানির ফোয়ারা। এই চত্বরেই ছড়িয়ে রয়েছে কিছু ভাস্কর্য। রোজ গার্ডেনের সাবেক মালিকের তিন তলার বাসস্থানটিই রূপান্তরিত হয়েছে ঢাকা জাদুঘরে। জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে এই ভবনটির সংস্কার করা হয়েছে।

আলোকসজ্জা, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাসহ বিভিন্ন কাজ শেষে ভবনটিকে জাদুঘরের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। ভবনটির প্রথম তলায় স্থাপিত হয়েছে  অভ্যর্থনা কক্ষ । দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকবে জাদুঘর। এই জাদুঘরে উপস্থাপিত হবে ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যসংবলিত  নানা অনুষঙ্গ।

প্যানেল হু

×