
বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রস্তাবের প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে বাগেরহাটবাসী। চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে বিক্ষোভ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট এবং সর্বদলীয় রাজনৈতিক পরিষদ গঠন করা হয়েছে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাজনৈতিক পরিষদ ইতোমধ্যে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। জেলাব্যাপী বিক্ষোভ, সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন চলছে।
সংসদীয় আসন কমানোর প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন সর্বদলীয় রাজনৈতিক পরিষদের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপির আহবায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, বাগেরহাট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, বিএনপি নেতা ব্যারিষ্টার জাকির হোসেন, খাদেম নিয়ামুল নাসির আলাপ, খান মনিরুল ইসলামসহ ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস নেতা সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ উদ্দিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাগেরহাটের সূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মঞ্জুরুল হক রাহাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম জানান, “নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আমরা সর্বদলীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে কর্মসূচি নিয়েছি। শনিবার ও রবিবার সকাল ১০টায় দশানী মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল হবে এবং জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।”
নির্বাচন কমিশনের আসন বিন্যাসকে “ভৌগোলিকভাবে হাস্যকর” উল্লেখ করে বিএনপি নেতা খান মনিরুল ইসলাম বলেন, “বাগেরহাট-২ আসনের সঙ্গে রামপালকে যুক্ত করা হয়েছে, যা সদর শহর থেকে অনেক দূরে। অন্যদিকে মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলাকে একত্র করে একটি মাত্র আসন করার প্রস্তাব জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকেও সম্পূর্ণ কাণ্ডজ্ঞানহীন। আমরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি। দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাব।”
জামায়াতের জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, “বাগেরহাটের চারটি আসন রক্ষায় আমরা একসঙ্গে কাজ করব। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বাগেরহাটের স্বার্থে সবাই দল-মতের ঊর্ধ্বে ঐক্যবদ্ধ।”
বিএনপি নেতা এম. এ. সালাম বলেন, “আসন কমানোর প্রস্তাব বাতিল না হলে বাগেরহাটকে অচল করে দেব। সরকারের সঙ্গে জেলার সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেব। আন্দোলনের মাধ্যমে চারটি আসন বহাল রাখা হবে।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম বলেন, “ইতিপূর্বে নির্বাচন কমিশন একটি দলকে সুবিধা দিতে ১২৫টি আসনের সীমা পরিবর্তন করেছিল। ১৯৭০ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি আসনেই নির্বাচন হয়ে আসছে। এবারও তাই হওয়া উচিত। এর ব্যতিক্রম হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। বাগেরহাটের চারটি আসনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, যা রক্ষায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব।”
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জাকির হোসেন বলেন, “আন্দোলনের পরও যদি নির্বাচন কমিশন তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তবে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চারটি আসনে নির্বাচন হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন ছিল। গতকাল বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি আসনের প্রাথমিক প্রস্তাব দেয় নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী ক্ষোভে ফুসে ওঠে। বুধবার রাতেই জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম. এ. সালামের নেতৃত্বে শহরে মিছিল বের হয়।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় যুবদল নেতা সুজন মোল্লার নেতৃত্বে “জেলা নাগরিক সমাজ” ব্যানারে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে প্রেসক্লাবের সামনে চারটি আসন বহালের দাবিতে যুবদল নেতাকর্মীরা মিছিল করেন। এছাড়া মোংলা, রামপাল, চিতলমারী ও মোড়েলগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সানজানা