ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

বোহেমিয়ার স্ক্যান্ডাল

মূল : আর্থার কোনান ডয়েল, অনুবাদ : খুররম মমতাজ

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ৩১ জুলাই ২০২৫

বোহেমিয়ার স্ক্যান্ডাল

(পূর্ব প্রকাশের পর)
দুজনে মিলে প্ল্যান করলাম ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো হবে- কেননা আমাদের পিছে লেগেছেন বিখ্যাত ডিটেকটিভ মিস্টার শার্লক হোমস। আপনি এসে দেখবেন নীড় ফাঁকা, পাখি উড়ে গেছে। হ্যাঁ ছবিটার বিষয়ে বলি...আপনার ক্লায়েন্টকে জানাবেন তার দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তার থেকে শ্রেয় একজন মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি আমি- আমিও তাকে ভালোবাসি।
রাজাকে বলবেন তিনি যে নারীকে দুঃখ দিয়েছেন, সে আর কখনো তাকে বিরক্ত করবে না। ছবিটা আমি রেখে দিলাম সাবধানতা হিসেবে, অস্ত্র হিসেবে- যাতে আমাকেও কেউ আর বিরক্ত না করতে পারে। আমার একটা ছবিও আমি দিয়ে গেলাম রাজাকে। আমার শেষ উপহার।
আপনার একান্ত-
ইরিন নর্টন এডলার

‘বাপরে! কী সাংঘাতিক মেয়ে?’ রাজা বলে উঠলো। ‘আগেই বলেছিলাম এ হচ্ছে ডাকিনি মেয়ে। রানী হলে দুর্দান্ত মানাতো তাকে। কিন্তু কী আর করা- সামাজিক দিক দিয়ে আমার লেভেলের নয় সে।’
‘হ্যাঁ ইয়োর ম্যাজেস্টি, যতটুকু চিনলাম তাকে, তাতে বলতে পারি এই নারী আপনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন লেভেলের।’ হোমস বললো। ‘আমি দুঃখিত আপনার কাজটা ঠিকঠাক মতো করে দিতে পারলাম না।’
‘ঠিক মতোই করে দিয়েছেন।’ খুশি খুশি গলায় বললো রাজা। ‘এর চেয়ে ভালো সমাধান আর হতে পারে না। এই নারী তার কথা রাখবে আমি জানি। ছবিটা ইরিনের কাছে থাকা আর আগুনে পুড়ে শেষ হয় যাওয়া একই কথা। আমি নিশ্চিন্ত।’
‘শুনে খুশি হলাম ইয়োর ম্যাজেস্টি।’
‘আমিও সন্তুষ্ট আপনার ওপর। বলুন কীভাবে আপনাকে প্রতিদান দিতে পারি। এই আংটিটা যদি-।’ হাতের মূল্যবান পান্নার তৈরি আংটিটা খুলে হোমসের দিকে এগিয়ে দিল রাজা।
‘এর চেয়েও মূল্যবান একটা জিনিস আছে ইয়োর মাজেস্টি আপনার কাছে। আপনি যদি সেটা আমাকে দিতেন।’ হোমস বললো।
‘কী জিনিস নামটা শুধু বলুন।’
‘ওই ছবিটা।’
‘ইরিনের ছবিটা চাচ্ছেন আপনি?’ রাজা অবাক চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলেন। তারপর বললেন। ‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই...নিন।’
‘ধন্যবাদ ইয়োর ম্যাজেস্টি। তাহলে আমাদের কাজ এখানেই শেষ। আপনাকে সুপ্রভাত জানাই।’ হোমস রাজাকে বাউ করলো। রাজার বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা উপেক্ষা করে সে ঘুরে দাঁড়ালো। আমরা ফিরে চললাম বেকার স্ট্রিটের দিকে।
বোহেমিয়া রাজ্য ঘিরে গড়ে ওঠা স্ক্যান্ডালের কেসটা এভাবেই শেষ হলো। যে কেসে শার্লক হোমস একজন নারীর কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিল। আগে সে মেয়েদের সম্পর্কে উল্টোপাল্টা কথা বলতো। আজকাল আর বলে না। যদি কখনো ইরিন এডলারের কথা ওঠে, কিংবা তার ছবির প্রসঙ্গ ওঠে- হোমস শ্রদ্ধার সঙ্গে বলে ওঠে, ‘সেই মেয়েটা!’


কার্ডে একটু দেখো তো নামটা।’ চোখ না খুলেই মৃদুকণ্ঠে বললো হোমস। বহু বছর ধরে সে ইনডেক্স কার্ড তৈরি করছে- বিভিন্ন বস্তু, বিষয় ও মানুষের নামের প্রথম অক্ষর ধরে ধরে। বিস্তারিত বিবরণসহ তা বর্ণমালা অনুযায়ী সাজানো আছে, আমি জানি। ইরিন এডলারের নাম লেখা কার্ডটা বের করলাম।
‘দেখি তো।’ হোমস বললো। ‘হ্যাঁ, এই যে। জন্ম নিউ জার্সিতে, ১৮৫৮ সালে। ওয়ারশ অপেরার প্রধান গায়িকা...হুম! এখন লন্ডনে বসবাস করছে। বুঝতে পেরেছি, ইয়োর ম্যাজেস্টি। এই যুবতীর সঙ্গে আপনি জড়িয়ে গেছেন, চিঠি লিখেছেন যাতে কিছু ইন্টিমেট কথা আছে, এখন চিঠিগুলো আপনি ফেরত চান, এই তো?’
‘হ্যাঁ ঠিক, একদম। কিন্তু কীভাবে যে-’
‘বিয়ে-টিয়ে কী হয়েছিল?’
‘না।’
‘তার মানে কোনো আইনগত দলিল নেই?’
‘না নেই।’
‘তাহলে এত চিন্তার কী আছে বুঝতে পারছি না ইয়োর ম্যাজেস্টি। এই যুবতি যদি ব্ল্যাকমেইল করতে চায়, কীভাবে সে প্রমাণ করবে তার দাবির সত্যতা?’
‘আমার চিঠিগুলো আছে তার কাছে।’
‘ফুহ! আমরা বলবো জাল চিঠি।’
‘কিন্তু...ব্যক্তিগত প্যাডে লেখা যে।’
‘চুরি করা প্যাড বলবো।’
‘আমার সিল-ছাপ্পর আছে প্যাডে।’
‘নকল সিল।’
‘আমার ছবিও আছে।’
‘বাজার থেকে কেনা ছবি।’
‘কিন্তু দুজনে আছি ছবিটাতে, একসঙ্গে-’
‘ওহ মাই গড! ইয়োর ম্যাজেস্টি এটা একটা মারাত্মক ভুল হয়েছে।’
‘কী করবো- পাগল হয়ে গিয়েছিলাম যে।’
‘ঘটনা জটিল হয়ে গেল।’
‘উচ্ছৃঙ্খল প্রিন্স ছিলাম তখন। বয়স কম ছিল। এখন আমার বয়স তিরিশ বছর।’
‘চিঠিগুলো ফেরত পেতেই হবে।’ হোমস বললো।
‘চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।’ হতাশ গলায় বললো বোহেমিয়ার রাজা। 
‘টাকা দিয়ে কিনে নিন ইয়োর ম্যাজেস্টি।’
‘বিক্রি করছে না।’
‘তাহলে চুরি করতে হবে।’
‘পাঁচবার চেষ্টা করেছি। পেশাদার চোর দিয়ে দুবার তার বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। একবার ভ্রমণের সময় তার লাগেজ সরালাম। আরেকবার তাকে থামিয়ে চেক করা হলো। সব বৃথা।’
‘ছবিটা পাওয়া যায়নি?’
‘না।’
হেসে উঠলো হোমস। ‘এ দেখি এক মজার রহস্য।’ বললো সে।
‘হ্যাঁ, কিন্তু আমার জীবন-মরণ সমস্যা।’ একটু ক্ষুণ্ন রাজার গলা।
‘অবশ্যই...অবশ্যই। ছবি দিয়ে কী করতে চায় ইরিন?’
‘আমাকে ধ্বংস করতে চায়।’
‘কীভাবে?’
‘আমার বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক-’
‘হ্যাঁ শুনেছি।’ 
‘স্ক্যান্ডিনেভিয়ার রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে। তার পরিবার খুব রক্ষণশীল। এখন যদি এমন একটা স্ক্যান্ডাল প্রকাশ পায়, তাহলে বিয়েটা বরবাদ হয়ে যাবে।’
‘ইরিন ঠিক কী করতে চায়?’ প্রশ্ন করলো হোমস। ‘কনের কাছে ছবি পাঠানোর হুমকি দিয়েছে সে।’ জবাব দিল রাজা। ‘ইরিন কাজটা ঠিকই করবে। আপনি তো তাকে চেনেন না- পাথর দিয়ে তৈরি তার মন। অপরূপ সুন্দরী নারী ইরিন, কিন্তু তার হৃদয় ইস্পাতের চেয়েও কঠিন। এ বিয়ে ভাঙবার জন্য সবকিছু করবে সে।’ (চলবে...)

×